“আমাদের চেয়ে বড় মাফিয়া নেই”—চট্টগ্রামে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এমন বিস্ফোরক বক্তব্য দিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শোকজ নোটিশ পেলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP)–এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য জোবাইরুল আলম মানিক।
মঙ্গলবার (১০ জুন) এনসিপির দপ্তর শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রকাশ করেছে দলটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল ৯ জুন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় দলটির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে জোবাইরুল মানিকের একটি বক্তব্য কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির নজরে আসে। বক্তব্যটি ছিল, “আমরা শেখ হাসিনার মতো মাফিয়াকে বিতাড়িত করেছি। এখন আমরাই হচ্ছি বড় মাফিয়া। আমাদের চেয়ে বড় মাফিয়া নেই।”
দলীয় বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এমন মন্তব্যে এনসিপির ভাবমূর্তি জনসমক্ষে ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং সংগঠনের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। এতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলার গুরুতর লঙ্ঘন হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
এ কারণে এনসিপির কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান আব্দুল্লাহ আল-আমিনের কাছে তিন দিনের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিতে বলা হয়েছে জোবাইরুল মানিককে। নতুবা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থান ও বিতর্কিত মন্তব্য
জোবাইরুল মানিকের বক্তব্যের একটি অংশে তিনি বলেন, “আমরা জুলাই অভ্যুত্থান সফল করেছি। বিগত ১৬-১৭ বছরে কেউ এমন নেতৃত্ব দিতে পারেনি। এটি একটি রাজনৈতিক বিপ্লব। শিক্ষার্থীরা তাদের কাজ শেষ করেছে বলার প্রশ্নই ওঠে না। তারা ১৬ বছরের একজন মাফিয়াকে হটাতে পেরেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের বুঝ দিয়ে আবার কেউ যদি মাফিয়া হয়ে উঠতে চায়, তাহলে তাদের বলতে চাই, এখন বাংলাদেশে যদি বড় মাফিয়া কেউ থাকে, সেটা আমরাই। আমাদের চেয়ে বড় মাফিয়া নেই।”
এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। অনেকেই মনে করছেন, এমন বক্তব্য রাজনীতিক শালীনতার পরিপন্থী এবং এটি দলীয় আত্মঘাতী অবস্থান তৈরি করতে পারে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা–কে ‘মাফিয়া’ আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ‘সবচেয়ে বড় মাফিয়া’ হিসেবে ঘোষণা—এই দ্বিমুখী বক্তব্য এনসিপির ভেতরেই অনেকে বিব্রত বলে জানা গেছে।
দলীয় শৃঙ্খলা কমিটির পক্ষ থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, এই বক্তব্যে এনসিপির অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং রাজনৈতিক কৌশলের দিক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।