কোরবানির ঈদের ছুটিতে হঠাৎ করেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)। এই ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে একরকম ভূমিকম্পই সৃষ্টি করেছে। তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি (BNP) ও বাম গণতান্ত্রিক জোট, যেখানে একপক্ষ নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, অন্যপক্ষ এই ঘোষণাকে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রয়াস হিসেবে দেখছে।
বিএনপি বলছে, ডিসেম্বরে নির্বাচন না হওয়ায় জনগণের ইচ্ছার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) অভিযোগ করেন, এপ্রিলের নির্বাচনী তারিখ রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছে এবং রোজার সময়কাল ও আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে এ সময় নির্বাচন অযৌক্তিক।
অন্যদিকে ইসলামী দলগুলো ও এনসিপি (NCP) শর্তসাপেক্ষে নির্বাচনের এই সময়সূচিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে পুরো রাজনৈতিক অঙ্গন এখন তাকিয়ে রয়েছে ১৩ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য ইউনূস-তারেক বৈঠকের দিকে, যেখানে নির্বাচনের সময় ও কাঠামো নিয়ে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মন্তব্য করেন, “বেশির ভাগ দলের মত উপেক্ষা করে যদি সরকার এপ্রিলেই নির্বাচনে যায়, তাহলে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “রমজান, পরীক্ষাসময়, আবহাওয়া—সব মিলিয়ে এ সময় নির্বাচন কার্যত জনগণের অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন মনে করেন, “মানুষ এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপ বুঝে উঠতে পারছে না। বারবার তারিখ পাল্টানোয় জনমনে অনিশ্চয়তা বেড়েছে।”
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বিপরীতমত পোষণ করে বলেন, “দেশের স্বার্থে মতপার্থক্য এড়িয়ে দলগুলোর উচিত নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করা। সময় যদি আলাপ-আলোচনায় এগিয়ে আনা যায়, তাও সমস্যা নয়।”
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ঘিরে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। বিএনপির পক্ষ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের দাবি উঠতে পারে। মির্জা ফখরুল বলেন, “এই বৈঠকে অনেক কিছুর সমাধান হতে পারে, এমনকি নতুন রাজনৈতিক দিগন্তও উন্মোচিত হতে পারে।”
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিএনপি একাধিকবার ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এসেছে। এমনকি তারেক রহমান খোলাখুলিভাবেই বলেছেন, “ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে।” কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর দলটি তার অবস্থান কতটা বদলাবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে ইউনূস-তারেক বৈঠকের ওপর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মারুফুল ইসলাম মনে করেন, “রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আলোচনার মাধ্যমে নতুন সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে। তাই ১৩ জুনের এই বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নির্ধারণী মুহূর্ত হতে পারে।”
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই আলোচনার ফল কী হবে? বিএনপি কি তাদের পূর্বঘোষিত অবস্থান থেকে একচুলও সরবে? নাকি সরকারের প্রস্তাবিত এপ্রিল নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ তৈরি হবে?