ইউনূস-তারেক বৈঠক: তারেক রহমানের জন্য বিএনপির উত্তরাধিকারী নয়, দেশের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে প্রমাণের সুযোগ

লন্ডনে ১৩ জুন অনুষ্ঠিতব্য ইউনূস-তারেক বৈঠক ঘিরে নানা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে, কিন্তু এর প্রকৃত গুরুত্ব কিছুটা সূক্ষ্ম। এটি একদিকে যেমন হতে পারে কৌশলগত সৌজন্য সাক্ষাৎ, তেমনি হতে পারে তারেক রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনসম্মুখে পরীক্ষা। এখনো পর্যন্ত কোনো প্রেস ইন্টারভিউ না দেওয়া, অথবা আন্তর্জাতিকভাবে যাচাই না হওয়া এই নেতা এই প্রথম ‘স্টেটসম্যান’ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

এই বৈঠক ঠিক কতটা ‘সিরিয়াস’?—এ প্রশ্নটা তাই একটু জটিল। হয়তো খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু চূড়ান্ত হবে না, আবার এটিই হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যতের অনেক ঘটনার সূচক।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউনূসের দিক থেকে প্রধান লক্ষ্য থাকবে বিএনপির সাম্প্রতিক উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত করা। তিনি চাইবেন, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে দলটির অবস্থান যেন সংঘর্ষের দিকে না গড়ায়। একইসঙ্গে তাঁর কিছু ‘লিগ্যাসি প্রজেক্ট’—যেমন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বা নির্ধারিত নির্বাচনী রোডম্যাপ—বিএনপির ট্যাকটিক্যাল সমর্থন ছাড়া সফল হবে না। যদি এই বৈঠক থেকে কোনো ধরনের ‘ট্যাসিট আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ বেরিয়ে আসে, তাহলে দেখা যাবে, দুই পক্ষ মুখে কিছু না বললেও ময়দানে আচরণে নরম হয়ে পড়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন থাকে: বিএনপি নেতৃত্ব এমন সংকেত দিলে মাঠের কর্মীদের আচরণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে? জামায়াতে ইসলামীর অভিজ্ঞতা কিন্তু সুখকর নয়। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রাইভেট আলাপে স্বীকার করেছে, তারা এখন আর ‘শিবিরের’ উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না।

তবে বিএনপির ক্ষেত্র আলাদা। তাদের সাংগঠনিক কাঠামো জামায়াতের তুলনায় অনেক বেশি কেন্দ্রভিত্তিক এবং নিয়ন্ত্রিত। সেই হিসেবে, একটি সমঝোতার আভাস এলেও বিএনপির তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া হয়তো বেশি অনুশাসনের মধ্যে রাখা যাবে—যদি না ‘ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাই’ স্লোগানটা আগুনে তেল ঢেলে দেয়।

ইউনূসও জানেন, এই বৈঠক থেকে স্রেফ রাজনৈতিক সৌজন্য বেরিয়ে এলেই হবে না। একটি প্রতীকী ‘স্টেটমেন্ট’ লাগবে—চুপচাপ থেকে নয়, বরং এমন কোনো সুর যা আগামী কয়েক সপ্তাহের রাজনৈতিক তাপমাত্রা ঠান্ডা করতে পারে।

অন্যদিকে, তারেক রহমানের জন্য এটি সেই সুযোগ যেখানে তিনি নিজেকে শুধু বিএনপির উত্তরাধিকারী নয়, দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের উপযুক্ত দাবিদার হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন—যতটা না দলের মধ্যে, তার চেয়েও বেশি আন্তর্জাতিক মহলের চোখে।

এই বৈঠক থেকে তাই অনেক কিছু হয়তো লেখা হবে না, বলা হবে না, তবু অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

— সাংবাদিক নাজমুল আহসানের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংকলিত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *