ফাহাম আব্দুস সালাম (Fahim Abdus Salam) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আলোচিত ফেসবুক পোস্টে সংসদে নারী কোটা নিয়ে প্রচলিত তিনটি মূলধারার অনুমানকে কঠোরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, এই তিনটি অনুমানকে প্রশ্নাতীতভাবে মেনে নেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক শুদ্ধতার (political correctness) দোহাই দিয়ে, অথচ এর পেছনে বাস্তবভিত্তিক কোনো তথ্য বা গবেষণা নেই।
তিনটি ‘অস্বীকৃত প্রেমিস’ যা নিরীক্ষাহীনভাবে মেনে নেওয়া হচ্ছে
ফাহামের দাবি অনুযায়ী, কোটাকামীরা নিম্নোক্ত তিনটি অনুমান ভিত্তি করেই আলোচনা শুরু করেন:
-
সংসদে নারী রাজনীতিবিদের উপস্থিতি অপরিহার্য এবং তা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এজন্য পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশনের প্রয়োজন।
-
নারী কোটা থাকলে নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়বে।
-
নারী কোটা নিয়ে একটি সর্বজনীন ঐকমত্য (ন্যাচারাল কনসেন্সাস) রয়েছে, ফলে কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা চলে না।
তবে তিনি এই ধারণাগুলোকে “Leap of Faith” বা যুক্তিহীন আত্মবিশ্বাস বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, এই ধারণাগুলোর পিছনে সমাজবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান বা জনগণের মতামতভিত্তিক কোনো প্রমাণ নেই।
জনগণের ইচ্ছা উপেক্ষা করে ‘এলিট সিদ্ধান্ত’
ফাহাম প্রশ্ন তোলেন, এই সিদ্ধান্ত কে নিয়েছে যে জনগণ নারী কোটা চায়? তার মতে, এ সিদ্ধান্ত এসেছে শহরের কিছু উচ্চশিক্ষিত নাগরিক, ফেসবুক (Facebook) ইনফ্লুয়েন্সার এবং বড়জোর ১০০০ জনের মতামতের উপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, “৪ কোটি মানুষের ফ্রি চয়েস কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, অথচ তাদের কাউকে জিজ্ঞেসও করা হয়নি তারা এই কোটা চায় কিনা।”
‘৫০% নারী’ যুক্তির ভুল বিশ্লেষণ
বহুল ব্যবহৃত যুক্তি—যেহেতু দেশের ৫০% মানুষ নারী, তাই সংসদেও তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত—কে তিনি একধরনের পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তি হিসেবে তুলে ধরেন। সংসদ একটি highly filtered, non-random সিস্টেম যেখানে নির্বাচিত হতে হলে বহু স্তর অতিক্রম করতে হয়। কাজেই এখানে প্রাকৃতিক অনুপাত ধরে প্রতিনিধিত্ব আশা করাই ভুল।
নারী কোটা ও বাস্তব অর্জন: রুমিন ব্যতীত আর কে?
ফাহাম উল্লেখ করেন, গত ৪০ বছরে সংসদে নারী কোটার আওতায় শত শত নারী সুযোগ পেলেও, কার্যকর রাজনীতিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন কেবল একজন— রুমিন ফারহানা (Rumeen Farhana)। তিনি প্রশ্ন করেন, “৪০ বছরে যদি এই কোটা বাস্তব অংশগ্রহণ তৈরি করতে না পারে, তাহলে এই পদ্ধতিকে সফল বলা যায় কিভাবে?”
বাস্তব রাজনীতি বনাম ফেইসবুক এক্টিভিজম
তার মতে, কোটাভিত্তিক মনোনয়নে যেসব নারী আসন পাবেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই রাজনীতিকে পেশা হিসেবে নেননি। তিনি সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “আপনি ১০০টা এমন নারীর তালিকা দিন, যারা বিগত ১০ মাসে অন্তত ১০ বার নিজ এলাকায় গিয়েছেন, ডোর-টু-ডোর প্রচারণা করেছেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, সারা পৃথিবীর রাজনীতিতে স্থানীয় জনসংযোগ একটি মৌলিক কাজ। কিন্তু এই ধরনের বাস্তব অংশগ্রহণকারী নারীর সংখ্যা গোনা যায় হাতে গোনা কয়েকজনেই।
এলিটিজম ও ভবিষ্যতের ব্যর্থতা
নারী কোটার পক্ষে যাঁরা, তাদের তিনি “এলিট” বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছেন, তাদের সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তার মতে, এই কোটার ফলাফল হিসেবে ভবিষ্যতে দলগুলো আরও বেশি করে ক্ষমতাবানদের স্ত্রী বা কন্যাদের নমিনেট করবে—না যে তারা বাস্তবে রাজনীতি করে, বরং শুধুমাত্র পারিবারিক পরিচয়ে।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও গন্তব্যহীনতা
ফাহাম লিখেছেন, নারী কোটার সফলতার প্রমাণ দিতে গিয়ে ভবিষ্যতে মানুষ নানা রকম অপ্রাসঙ্গিক উদাহরণ দিতে শুরু করবে—যেমন নারী এমপির ফ্যাশন, বিদেশে বক্তৃতা, অথবা মসজিদের পাশে মেয়েদের টয়লেট। তিনি কৌতুক করে বলেন, প্রথম আলো হয়তো লিখবে, “এবার ঈদে এমপি দুররে ফিশানের ব্লাউজ পরে আপনিও হোন সংসদের তারকা!”
উপসংহার: ১২ বছর পর প্রমাণিত হবে
শেষে ফাহাম বলেন, “আপনারা জিতবেন, আমি হারব। কিন্তু ১২ বছর পর আপনারা নিজেরাই বলবেন—আমি সঠিক ছিলাম।” তিনি আশাবাদী, সময়ই প্রমাণ করবে নারী কোটার এই কাঠামো ব্যর্থ হবে এবং রাজনীতিতে প্রকৃত অংশগ্রহণ না থাকলে শুধুমাত্র পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশনে কোনো ফল আসে না।