এনসিসি এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান: ‘জবাবদিহিহীন কাঠামো সমর্থন করা যায় না’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নিয়ে সংবিধানিক কাঠামো ও রাষ্ট্র পরিচালনার ভারসাম্য নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছেন বিএনপি (BNP)-র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed)। তিনি বলেছেন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব বিএনপির পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এটি একটি “জবাবদিহিহীন ও ভারসাম্যহীন” কাঠামো তৈরি করবে।

বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় দিনে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “এনসিসি-র মতো একটি সংস্থা, যার বড় দায়িত্ব ও ক্ষমতা থাকবে, কিন্তু জবাবদিহিতা থাকবে না—এটা কোনো গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে পড়ে না। আমরা এই ধরনের ব্যবস্থাকে সমর্থন করতে পারি না।”

তিনি জানান, নির্বাহী বিভাগ এবং সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী যেসব দায়িত্ব নির্ধারিত, তা একটিমাত্র স্বশাসিত অথচ জবাবদিহিহীন প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া রাষ্ট্র কাঠামোর ভারসাম্য নষ্ট করবে। বিএনপি তাই এনসিসির মতো প্রস্তাবে একমত হতে পারছে না।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনাতেও দলটির অবস্থান ছিল সুনির্দিষ্ট। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউনিয়ন থেকে সংসদ সদস্য পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার প্রতিনিধি নিয়ে একটি ইলেকটোরাল কলেজ গঠনের যে ধারণা দেওয়া হয়েছে, সেটিকে বিএনপি “জনগণের ভোটাধিকার হরণে আরেকটি ছলচাতুরী” হিসেবে দেখছে।

সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। যদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠিত হয়, সেক্ষেত্রে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিদেরও যুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিদের যুক্ত করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করাটা একটি অনাবশ্যক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”

সংলাপে স্বাধীন বিচারব্যবস্থার গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে রাষ্ট্রের ভারসাম্য রক্ষা হবে, ফ্যাসিবাদী প্রবণতা কমবে এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার্যকর চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সৃষ্টি হবে।”

সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল (Ombudsman) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও দেয় বিএনপি। সালাহউদ্দিন জানান, “আমরা মনে করি, মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এবং নির্বাচন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা বাড়াতে প্রচলিত আইন সংশোধন ও সংস্কার প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “জবাবদিহি ছাড়া কোন সংস্থা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না। কমিশনগুলোর রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীন হতে হবে। তখনই প্রকৃত গণতন্ত্র ও সুশাসনের পথ তৈরি হবে।”

বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট—যেকোনো সংস্কার এমন হতে হবে যা ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রোধ করে, বরং বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *