জাতীয় নাগরিক পার্টি (Nationalist Citizen Party – NCP) ঘোষিত কুমিল্লা জেলা সমন্বয় কমিটি ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। এই কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ঘোষিত হয়েছেন দীর্ঘদিনের বিএনপি (BNP) নেতা আব্দুর রহিম জুয়েল। তবে এনসিপির পক্ষ থেকে পদ দেওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জুয়েল এর প্রতিবাদে মুখর হন—এবং বিষয়টিকে “গুজব” আখ্যা দেন।
গতকাল ১৭ জুন রাতের দিকে এনসিপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ৩১ সদস্যের একটি কুমিল্লা জেলা সমন্বয় কমিটি প্রকাশ করে দলটি। সেখানে প্রধান সমন্বয়কারীর পদে ছিলেন আব্দুর রহিম জুয়েল। তবে রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি দাবি করেন, এটি তার অজান্তে ও সম্মতি ছাড়াই করা হয়েছে। আজ বুধবার (১৮ জুন) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমি ৩৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কোন দুঃখে বিএনপি ছাড়তে যাব? তরুণদের দলে (এনসিপি) যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
জুয়েলের অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার নাম দিয়ে এনসিপি বিভ্রান্তিকর কমিটি ঘোষণা করেছে, যেন তার রাজনৈতিক বিশ্বাস ও দলের প্রতি আনুগত্য নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়। তিনি বলেন, “আমি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছি, এখনো বিএনপির সঙ্গে যুক্ত। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করতেই এমনটা করা হয়েছে।”
ঘোষিত কমিটিতে পাঁচজনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ২৫ জনকে সদস্য করা হয়েছে। এটি পরবর্তী তিন মাস অথবা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে কমিটির অনুমোদনপত্রে উল্লেখ ছিল। এতে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ (Hasnat Abdullah) স্বাক্ষর করেন।
আব্দুর রহিম জুয়েলের রাজনৈতিক অতীতও শক্তিশালী। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবনে লাকসামের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নির্বাচিত সভাপতি, পরে লাকসাম উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি নাঙ্গলকোট বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। পেশাগতভাবে একটি বীমা কোম্পানিতে কর্মরত।
ঘটনার পরপরই এনসিপির ফেসবুক পেজ থেকে কমিটি সরিয়ে ফেলা হয়। তবে এই নিয়ে এনসিপির অভ্যন্তরে ভিন্ন সুরও শোনা যাচ্ছে। এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হাফসা জাহান বলেন, “জুয়েল সাহেবের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তার মতামতের ভিত্তিতেই তাকে প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেও কথা হয়েছিল, তিনি বলেছেন শরীর খারাপ—তাই দায়িত্ব নিতে পারবেন না। এরপরই আমরা তালিকা সরিয়ে ফেলি।”
তবে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার পর কুমিল্লা বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এনসিপির উদ্দেশ্য ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে দলীয় মহলেও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।