২০২৪ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থে বিস্ময়কর এক লাফ দেখা গেছে। বছরের শেষ নাগাদ দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ গুণ বেশি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) এই তথ্য প্রকাশ করেছে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Swiss National Bank)।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে আমানতের পরিমাণ ছিল ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী (প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা) এটি দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকায়। অথচ ২০২৩ সালের শেষে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ২ কোটি ৬৪ লাখ ফ্রাঁ বা ৩৯৬ কোটি টাকা। ২০২২ সালে পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৮৪ লাখ ফ্রাঁ, অর্থাৎ প্রায় ৮৭৬ কোটি টাকা।
এই অর্থের উৎস হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা—প্রায় ৯৫ শতাংশ অর্থই বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, যা মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য লেনদেন কেন্দ্রিক। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, এই বিপুল অঙ্কের টাকার মধ্যে অবৈধ অর্থপাচার হয়ে থাকতে পারে। যদিও এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank)-এর অধীনস্থ বিএফআইইউ (Bangladesh Financial Intelligence Unit) কয়েকবার সুইজারল্যান্ডের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (FIU) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু সুইস কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যক্তিগত তথ্য বা তালিকা সরবরাহ করেনি। তারা জানিয়েছে, যদি কারো অর্থপাচারের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দেওয়া হয়, তাহলে তারা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
এখানে আরও একটি দিক গুরুত্বপূর্ণ—যেসব বাংলাদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান অন্য দেশের নামে অর্থ গচ্ছিত রেখেছে, সেসব অর্থ এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে রাখা শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যও এই পরিসংখ্যানে ধরা হয়নি।
বিশ্বব্যাপী বিত্তশালী ব্যক্তিরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে তাদের সম্পদ সংরক্ষণ করে থাকেন। তবে বাংলাদেশিদের অর্থের এই হঠাৎ বৃদ্ধি সমাজে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন দেশে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে।