“সবার ওপরে দেশ” স্লোগান নিয়ে ছাত্রদের আরেক নতুন দলের আত্মপ্রকাশ

রাজনীতির অঙ্গনে আরও একটি নতুন দলের সংযোজন ঘটেছে। শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে (Central Shaheed Minar) আংশিক কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি (বিআরপি)। ‘সবার ওপরে দেশ’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও নেতৃত্ব ঘোষণা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী আয়াতুল্লাহ বাস্তি দলটির নাম ঘোষণা করেন। পরে শহীদ আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তী বেলুন উড়িয়ে দলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সম্পন্ন করেন।

আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন—‘সংস্কার না নির্বাচন’, ‘দিল্লি না ঢাকা’, ‘আপস না সংগ্রাম’, ‘রাজপথ রাজপথ’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘রিপাবলিক জিন্দাবাদ’, ‘ক্ষমতা না জনতা’ ইত্যাদি।

বিআরপির আংশিক কমিটি ঘোষণা

দলটির ২৮ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন শহীদ আনাসের মা। এতে উল্লেখযোগ্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন:

  • সভাপতি: লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মেহেদী হাসান
  • সিনিয়র সহ-সভাপতি: সাঈদ আলী সিকদার
  • সহসভাপতি: ক্যাপ্টেন শফিকুল ইসলাম (অব.), লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ইমরান, আয়াজ আহমেদ, অ্যাডভোকেট নাসিম উদ্দিন মোহাম্মদ বায়েজিদ
  • সাধারণ সম্পাদক: মেজর (অব.) মো. রাজিবুল হাসান
  • যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক: লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান, সাজ্জাদ হোসেন ইউনুস, মো. আহসানুল্লাহ
  • প্রধান উপদেষ্টা: মো. সেলিম প্রধান (Md. Selim Pradhan)
  • সাংগঠনিক সম্পাদক: মেজর (অব.) রাকিবুল হাসান
  • কৃষি, আইন, নারী ও শিশু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আরও অনেককে মনোনীত করা হয়।

দলীয় ঘোষণা ও দর্শন

বিআরপির যুগ্ম সদস্য সচিব সাজ্জাদ হোসেন ইউনূস দলটির ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। সেখানে বলা হয়, দলটি একটি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে, যার মূল লক্ষ্য হবে সামষ্টিক কল্যাণ এবং নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা।

বক্তব্যে প্রত্যাশা ও ক্ষোভ

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে জনগণের অংশগ্রহণ ও হতাশা তুলে ধরেন। শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া (Shahidul Islam Bhuiyan) বলেন, “আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছি। তার ত্যাগ যেন বৃথা না যায়।”

শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়া খান পলাশ তীব্র ভাষায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানান এবং বলেন, “খুনি হাসিনার বিচার চাই। বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হচ্ছে না।”

রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে নতুন রাজনীতি

সাবেক সেনা কর্মকর্তা রাজিব আহমেদ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবসা করছে। আমরা মানবিক রাষ্ট্র গড়তে রাজনীতিতে এসেছি।”

সভাপতির সমাপনী বক্তব্য

সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, “আমরা জনগণের রাজনীতি করতে এসেছি, বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করতে চাই।” তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, “সংস্কারের রোডম্যাপ প্রকাশ করুন। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে জনগণ আপনাকেও ব্যর্থ বলবে।”

তিনি আরও বলেন, “দেশকে কারও কাছে বিক্রি করে দেওয়া যাবে না। জনগণই জানে কাকে ভোট দিতে হবে।”

নতুন দলটির আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি সামনে এসেছে, যা ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট’ বাস্তবায়নে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *