আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিলেন গোলাম রাব্বানী। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন তিনি, এমনকি নির্বাচনও করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সরকার পতনের পর তিনি হঠাৎই রাজনৈতিক অভিমুখ পাল্টে গণঅধিকার পরিষদ (Gonodhikar Parishad)-এ যোগ দেন এবং খুব দ্রুতই জেলার আহ্বায়ক হন। এরপরই তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে, যার ফলে ৫ জুন দল থেকে বহিষ্কার হন তিনি।
বহিষ্কারের এক সপ্তাহ না যেতেই রাব্বানীকে এবার দেখা গেল জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party – NCP)-তে। দলটির ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) প্রকাশিত ৩১ সদস্যের নওগাঁ জেলা সমন্বয় কমিটির তালিকায় তার নাম রয়েছে। নতুন পরিচয়ে তিনি এখন এনসিপির জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য।
প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা এবং ব্যবসায়ী পরিচয়ের পাশাপাশি গোলাম রাব্বানী প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম (Israfiul Alam)-এর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, ইসরাফিলের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় একাধিকবার সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং মারধর করেছেন তিনি।
২০২৪ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীকে অংশ নিয়ে মাত্র ২৭২৪ ভোট পান এবং জামানত হারান।
এনসিপিতে তার প্রবেশ নিয়ে শহরজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একদিকে জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত একটি দল হিসেবে এনসিপির কাছ থেকে মানুষ ভিন্নধর্মী রাজনীতির প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু সেখানে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ এবং বিতর্কিত ব্যক্তিকে দায়িত্বে আনার ঘটনায় চরম হতাশা তৈরি হয়েছে।
নওগাঁয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আরমান হোসেন বলেন, “আওয়ামী ঘনিষ্ঠদের দিয়ে দল সাজালে সেটা আর ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা থাকে না। এনসিপির আত্মপ্রকাশের পর থেকেই দেখছি তারা একই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির চর্চা করছে—আসামি ছাড়ানো, চাঁদাবাজি, প্রভাব খাটানো।”
এদিকে গণঅধিকার পরিষদ-এর নওগাঁ জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান জানান, গোলাম রাব্বানীর আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বহুবার কেন্দ্রীয় কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, রাব্বানী রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুমন কবিরকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আহ্বায়ক পদ বাগিয়েছিলেন।
গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়েও জিয়াউর বলেন, “৫ আগস্টের আগে তিনি কখনও দলের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। ক্ষমতা বদলের পরই হঠাৎ যোগ দেন, আর কিছুদিনের মধ্যে আহ্বায়ক হয়ে যান।”
অন্যদিকে, নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম রাব্বানী বলেন, “আমি ২০২১ সাল থেকেই গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতিতে ছিলাম। কিন্তু দলে অগণতান্ত্রিক আচরণ এবং নেতিবাচক সংস্কৃতির কারণে আমি ১১ জুন লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছি।” তিনি অভিযোগ করেন, গণঅধিকার পরিষদ তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে ১৮ জুন ‘পূর্ব তারিখে’ ভুয়া বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে, যেখানে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী সম্পৃক্ততার ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
রাব্বানী বলেন, “২৪ সালের পর থেকে আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আর কোনোভাবে যুক্ত না। আমি এনসিপির রাজনীতিকে ইতিবাচক মনে করেছি, তাই এখানে যোগ দিয়েছি।”
তবে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেত্রী এবং নওগাঁ জেলার প্রধান সমন্বয়ক মনিরা শারমিন (Monira Sharmin)-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
নতুন দল, পুরোনো প্রশ্ন—রাজনীতির এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া জনগণের মনে সত্যিকারের পরিবর্তনের প্রত্যাশায় ধাক্কা দিচ্ছে।