দীর্ঘ নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশে ফিরতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)। ১৭ বছর পর তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিএনপির মধ্যে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু পরিকল্পনামতো চললে ২০২৫ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহেই লন্ডন থেকে ঢাকায় পা রাখতে পারেন তিনি।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু ব্যক্তিগত কোনো সিদ্ধান্ত নয়—এটি বিএনপির রাজনীতিতে বড়সড় মোড় ঘোরানোর প্রস্তুতি হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এক বছর আগে, গত বছরের ৫ আগস্ট, দলটি যে ‘গণঅভ্যুত্থানের’ মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের পতনের দাবি করেছিল, সেই তারিখটি উদ্যাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে এবার। ওই দিন ঢাকায় একটি বৃহৎ মহাসমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে, এই সমাবেশে সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারেন তারেক রহমান নিজেও।
পরিবারসহ প্রত্যাবর্তন, সিলেট হয়ে ঢাকায় প্রবেশ
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের সঙ্গে থাকবেন তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান (Dr. Zubaida Rahman) ও তাঁদের কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমান (Barrister Zaima Rahman)। তাঁরা লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেট হয়ে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তাঁর প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বাসস্থান ও নিরাপত্তা ঘিরে কড়া প্রস্তুতি
প্রথমে কোথায় উঠবেন তারেক রহমান, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। গুলশান-২ এর অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর ডুপ্লেক্স বাড়িটি তাঁর থাকার জন্য প্রস্তুত করা হলেও, শেষ পর্যন্ত তিনি সেখানে থাকবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি না রাখতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটি সরকারের কাছে বিশেষ নিরাপত্তা চাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। একইসঙ্গে চেয়ারপারসনের নিজস্ব নিরাপত্তা ইউনিট ‘সিএসএফ’ সার্বক্ষণিক তারেক রহমানের সঙ্গে থাকবে। এছাড়া তাঁর বাসভবন ও অফিস ঘিরে বহিস্তরীয় নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের বক্তব্য: “দেশে ফিরবেন হঠাৎ, থাকবে বড় চমক”
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (Goyeshwar Chandra Roy), বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, বলেছেন, “তারেক রহমান কবে ফিরবেন তা একমাত্র তিনিই জানেন। আগাম কিছু বলা যাবে না। তবে ফেরার আগে একটি বড় সারপ্রাইজ থাকবে। হঠাৎ একদিন ঘোষণা আসবে—আগামীকাল ফিরছেন তারেক রহমান। সেদিন ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে তাঁর বাসা পর্যন্ত যে জনস্রোত নামবে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ দেখেনি।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (Shahid Uddin Chowdhury Annie) বলেন, “তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলেও সরকার বা অন্য কোনো দল তাকে ফিরিয়ে আনতে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। সরকার যদি সত্যিই সিরিয়াস হতো, তাহলে দায়িত্ব নিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনত।” তিনি আরও জানান, আগে কিছু আইনি জটিলতা থাকলেও এখন আর কোনো বাধা নেই।
নির্বাসনের ইতিহাস: ১/১১ থেকে লন্ডনের পথে
২০০৭ সালের ১/১১ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময়, ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডন পাড়ি জমান। এরপর থেকেই তাঁরা লন্ডনে অবস্থান করছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) কারাগারে যাওয়ার পর, দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তারেক রহমান।
এখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। দলের ভেতরে এখন শুধু অপেক্ষা—সে দিনটির, যেদিন দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে ঢাকায় ফিরে আসবেন তারেক রহমান।