রাঙামাটিতে ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর, সংঘর্ষে ছাত্রদল-শিবির মুখোমুখি

রাঙামাটিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এক নেতাকে মারধরকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। শুক্রবার (২০ জুন) জুমার নামাজের পর শহরের বনরূপায় ঘটে এ ঘটনা, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার রূপ নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধ কমিটি) সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন কায়সার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে একটি ট্যাক্সিতে করে রওনা দেন। ঠিক সেই সময়, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে ধরে ফেলে এবং গাড়ির ভেতরে তাকে মারধর করে। কায়সারের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে যায় বলেও জানা গেছে।

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাহেদ জানান, “আমরা খবর পেয়ে কায়সারকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে ঘটনাটি এখানেই থেমে থাকেনি। ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদল ও শিবির কর্মীদের মধ্যেও চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ উঠেছে, এ সময় শিবিরের একটি দল ছাত্রদলের দুই নেতার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে ছাত্রদলও পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়ে। এতে শিবিরের অন্তত পাঁচজন কর্মী আহত হন। পরে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর শাহ অভিযোগ করে বলেন, “যখন সবাই কায়সারকে মারছিল, তখন শিবিরের এক সদস্য আমাকে ও আকাশকে বিনা উসকানিতে ঘুষি মারে।” এরপর শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদলের কর্মীরা জড়ো হয়ে শিবির কর্মীদের ধাওয়া দেয়। শিবির কর্মীরা পালিয়ে ইসলামী সেন্টারে আশ্রয় নেন।

এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঘটনার বিষয়ে রাঙামাটি জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শাফি দাবি করেন, “তেমন কিছুই হয়নি, এটা একটি ভুল বোঝাবুঝি।”

জেলা জামায়াতের শূরা সদস্য অ্যাডভোকেট হারুনুর রশীদ বলেন, “ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী আনোয়ার কায়সারকে আটক করার সময় তাকে মারধর করা হচ্ছিল। সে সময় না চেনার কারণে শিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। আমরা দ্রুত গিয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। তবে শিবিরের একজনকে একটু বেশি মারধর করা হয়েছে।”

রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদও একই সুরে বলেন, “বিষয়টি আমরা আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করব।”

সংঘর্ষ ও ভুল বোঝাবুঝি ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও, শেষ পর্যন্ত শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *