কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস (Project Implementation Office)-এর দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মসজিদের উন্নয়ন তহবিল থেকেও ঘুষ দাবি করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা হলেন অফিস সহকারী মাসুম শেখ ও সাব-ইঞ্জিনিয়ার আজিজ।
ঘটনাটি জানাজানি হয় রামকৃষ্ণপুর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি রহমত আলীর মাধ্যমে। তিনি জানান, মসজিদের উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথম ধাপে যখন ৬০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়, তখন অফিস সহকারী মাসুম শেখ ঘুষ হিসেবে দাবি করেন ১৫ হাজার টাকা। “বলে ছিল, পরের চেক নেয়ার সময় দিয়ে দেব। আমরা তো মসজিদের টাকার জন্য অনুরোধ করে চেকটা নিই।” — এমনটাই জানান রহমত আলী।
কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের টাকা তুলতে গেলে তাদের জানানো হয়, আগের ১৫ হাজার টাকা না দিলে নতুন চেক মিলবে না। চেক পাওয়ার শর্তস্বরূপ দাবি করা হয় ঘুষ। তবে কেন ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত মাসুম শেখ ও আজিজকে প্রশ্ন করলে তারা একেক সময় একেক কথা বলেন। কখনও বলেন ‘স্যারের অনুমতিতে’ টাকা নেওয়া হয়, কখনও আবার পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তবে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে কেউই রাজি হননি।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাবেদ পাঠানকে অফিসে না পাওয়া গেলে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, “মাস্টাররোল তৈরির জন্য কিছু খরচ হয়, যা সাধারণত ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে থাকে। আমি নিজেই তাদের জিজ্ঞেস করবো কেন এত বেশি টাকা চাওয়া হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে ইটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম (Mohammad Raihanul Islam) জানান, “প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তার আত্মীয়ের মৃত্যুতে অফিসে নেই। তারপরও আমি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।”
উল্লেখ্য, ‘টিআর’ (ত্রাণ কাজ) এবং ‘কাবিখা’ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) সরকারের একটি বিশেষ কর্মসূচি যার মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মন্দির ইত্যাদিতে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে সেই বরাদ্দ থেকেই ঘুষ দাবি করা হলে প্রশ্ন ওঠে সরকারি কর্মকর্তাদের নৈতিকতা নিয়ে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকায় ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন—যেখানে মসজিদের টাকাতেও হাত পড়ছে, সেখানেই বা বাকি সরকারি প্রকল্পগুলোর অবস্থা কেমন?