আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান (Shajahan Khan)। আদালতে হাজিরা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মব তৈরি করে হত্যা করা হচ্ছে। এর বিচার হবেই। কেউ যেন মনে না করে, এসবের বিচার হবে না।”
সোমবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর একটি আদালতে আনিসুল হক (Anisul Haque), সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman) এবং শাজাহান খানকে হাজির করা হয়। তারা সবাই ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাজেদুর রহমান ওমর হত্যার মামলায় অভিযুক্ত। আদালত তিনজনেরই দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
হাস্যরসের ছায়ায় কঠিন বার্তা
আদালত থেকে বের হয়ে শাজাহান খান বলেন, “১৬২ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এক মাঘে শীত যায় না—সবকিছুর বিচার হবে।” এরপর দেশ পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি মুচকি হেসে বলেন, “আপনারা তো দেখছেনই, এক হাতে তালি বাজে না।” তার এই কথায় অনেকটাই বোঝা যায় যে, তিনি সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি বিরোধীদের ভূমিকাও ইঙ্গিত করছেন।
আদালতে হাজিরা ও আচরণ
আদালতে হাজিরার সময় তিন নেতার পরনে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট এবং হাতে হ্যান্ডকাফ। কাঠগড়ায় ওঠার পর পুলিশ তাদের হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ খুলে দেয়। তখন শাজাহান খান ও আনিসুল হককে পরস্পরের সঙ্গে গল্প করতে দেখা যায়। বিচারক এজলাসে প্রবেশ করলে তারা নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। সালমান এফ রহমানকে দেখা যায় একদম পেছনের সারিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে।
আদালত শেষে সাংবাদিকরা সালমান এফ রহমানকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। তার পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা ও বার্মিজ সেন্ডেল।
রিমান্ড শুনানি: রাজনীতি বনাম তদন্ত
আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় শাজাহান খান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী-কে উদ্দেশ করে বলেন, “তিনি বিএনপির বড় নেতা। বারবার আমাদের ভূতুড়ে মামলায় রিমান্ডে নিচ্ছেন কেন?”
ফারুকীর জবাব ছিল রাজনৈতিক ও আইনি বিশ্লেষণে মোড়া: “আসামিরা নীতিনির্ধারণী বৈঠকে অংশ নিয়েছেন, মিডিয়ায় প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন আন্দোলন দমন করবেন—এরা সাধারণ আসামি না।” তিনি আরও বলেন, “মামলা করেছে ভুক্তভোগীদের পরিবার। তদন্তকারী সংস্থা রিমান্ড চেয়েছে, আমরা শুধু শুনানি করি।”
যাত্রাবাড়ীর ওমর হত্যা মামলা: পটভূমি
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২১ জুলাই কাজলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে ছাত্র ও জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন সাজেদুর রহমান ওমর। বিকেলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং পরে ২৪ আগস্ট মারা যান। ৩ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সৈয়দ তানভীর আহমেদ।
আলোচিত আরও রিমান্ড আদেশ
এ দিন একাধিক মামলায় আরও রিমান্ড আদেশ দেন আদালত। রিটন উদ্দিন হত্যা মামলায় কাজী মনিরুল ইসলাম মনু (Kazi Monirul Islam Monu) একদিনের রিমান্ডে যান। রাসেল হত্যা মামলায় তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর হয়।
অন্যদিকে, গণঅধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনকে হত্যাচেষ্টার মামলায় সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহাইলকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্তে বলা হয়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থানরত সায়মনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় আসামিরা। পরে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এ ছাড়া কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা (Sarwar Jahan Badsha) এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম (Tajul Islam)-কে পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সার্বিক চিত্র
বর্তমান সময়ে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রিমান্ড, আদালতে হাজিরা, তদন্ত ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য—সবমিলিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়ছে। শাজাহান খানের হুঁশিয়ারি—‘বিচার হবেই’—দলের ভেতর ও বাইরে প্রতিধ্বনি তুলেছে।