বিতর্কিত তিন মেয়াদের নির্বাচন কমিশনের সাবেক প্রধান ও সদস্যদের পাসপোর্ট বাতিল করেছে সরকার। আলোচিত তিনজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার—কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ (Kazi Rakibuddin Ahmad), কেএম নূরুল হুদা (KM Nurul Huda) ও কাজী হাবিবুল আউয়াল (Kazi Habibul Awal)—সহ মোট ১৫ জন সাবেক নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি সাবেক সিইসি নূরুল হুদা গ্রেফতারের পর বিষয়টি সামনে আসে। এরপরই পাসপোর্ট অধিদপ্তর এসব সাবেক কমিশনারদের পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারপ্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে নির্বাচন কমিশনের সাবেক প্রধান ও সদস্যদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে।
ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ নুরস ছালাম বলেন, “বিগত সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা সিইসি ও কমিশনারদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
তিন কমিশন, তিন বিতর্ক
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রধান বিরোধী দলের বর্জনের প্রেক্ষাপটে এ নির্বাচন ‘জোরজবরদস্তির নির্বাচন’ নামে পরিচিতি পায়। সেই সময়কার কমিশনাররা ছিলেন মো. শাহ নেওয়াজ, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, মো. আব্দুল মোবারক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী।
এরপর ২০১৭ সালের কমিশনে কেএম নূরুল হুদা সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। এই কমিশনের সদস্য ছিলেন কবিতা খানম, মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম ও শাহাদাত হোসেন। এই কমিশনের নাম ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছে ‘রাতের ভোটের নির্বাচন কমিশন’ হিসেবে।
সবশেষ ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব পালন করে ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই কমিশন ‘আমি ও ডামি’ নামে সমালোচিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে নিজেরাই ‘ডামি’ প্রার্থী দাঁড় করায়। কমিশনের অন্যান্য সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ আলমগীর, আনিসুর রহমান, আহসান হাবিব খান ও রাশিদা সুলতানা।
গোয়েন্দা নজরদারি ও সম্পদ অনুসন্ধান
সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এখন সাবেক কমিশনারদের বর্তমান অবস্থান শনাক্তে মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন পুলিশ ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে তাদের বিদেশ গমন সম্পর্কিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শুরু করেছে তাদের সম্পদ তদন্ত।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দায়িত্বে থাকাকালীন সাবেক সিইসি ও কমিশনারদের কূটনৈতিক মর্যাদার লাল পাসপোর্ট (ডিসি) প্রদান করা হয়। অবসরের পর তাদের তা ফিরিয়ে দিয়ে সাধারণ ই-পাসপোর্ট গ্রহণ করতে হয়। তিন মেয়াদের সবাই নিয়মমাফিক সাধারণ পাসপোর্ট নিয়েছিলেন, যা এবার বাতিল করা হলো।
তবে, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, “পাসপোর্ট বাতিলের আগেই কেউ দেশ ত্যাগ করলে তা জানা বা বাধা দেওয়ার এখতিয়ার পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নেই।” ফলে এদের কেউ আগে থেকেই বিদেশে থাকলে সেটি এখনো অস্পষ্ট।
নির্বাচনের নামে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে সামনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ, তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।