বিএনপি’র জোট গঠনের আলোচনা, “যৌক্তিক ও প্রাপ্যতা অনুযায়ী” ছাড়

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। দলটি এবার ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদের মধ্যে ‘যোগ্যতা’ ও ‘গ্রহণযোগ্যতা’ বিচার করে সর্বোচ্চ ৫০টি আসনে ছাড় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে যেসব শরিক নেতা তাদের নিজ এলাকায় জনভিত্তি গড়েছেন এবং বিজয়ের সম্ভাবনা রাখেন, তারাই পাবেন বেশি গুরুত্ব। এবারের নির্বাচনী কৌশলে আগের মতো ঢালাওভাবে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক কাউকে না দেয়ার দিকে মনোযোগী হয়েছে বিএনপি।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে শরিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি নবগঠিত এনসিপি (NCP) দলকেও নির্বাচনী জোটে টানার কথা ভাবছে বিএনপি। এমনটি হলে, দলটির সামর্থ্যবান শীর্ষ নেতাদের জন্য বেশ কিছু আসন ছাড় দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

রাজনৈতিক সূত্র বলছে, লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-এর মধ্যে আলোচিত বৈঠকের পর বিএনপি নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন শরিক দল নিজেদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তারাও জানতে চাইছে, বিএনপি তাদের জন্য কতটুকু জায়গা রাখছে নির্বাচনী জোটে। তবে এখনো আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়নি।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে আগে যে ৪০টির মতো দল ছিল, তাদের মধ্যে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছয় দলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১০ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চার দলীয় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, গণফোরামবাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ও এনডিএম (NDM) অন্যতম।

বিএনপি সূত্রের দাবি, এবার তারা জোটের শরিকদের “যৌক্তিক ও প্রাপ্যতা অনুযায়ী” আসন দেবে। যাদের জনপ্রিয়তা বা মাঠ পর্যায়ে ভোট ব্যাংক আছে, তাদের অগ্রাধিকার পাবে। কেউ হয়তো জয়ের দৌড়ে নেই, তবু জোটের ঐক্য রক্ষায় তাদেরও কিছু আসন দেওয়া হতে পারে।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি শরিক জামায়াতে ইসলামীর জন্য ২২টি আসন ছেড়েছিল। তবে এবারে জামায়াত এককভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলে, তাদের সঙ্গে আর আসন বণ্টনের আলোচনা থাকছে না। সেই আসনগুলো এবার অন্য শরিকদের মধ্যে ভাগ হতে পারে।

এদিকে, এনসিপি গঠনকালীন সময় থেকেই বিএনপির মধ্যে দলটির প্রতি একটা ‘গণ-অভ্যুত্থান সহযোগী’ ভাবনার জায়গা ছিল। যদিও এনসিপির কিছু নেতার ‘বিএনপিবিরোধী’ বক্তব্যের কারণে সম্পর্কটা কিছুটা খারাপ হয়। সূত্র বলছে, এরপরও বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে এনসিপি নির্বাচনী জোটে আসতে চাইলে, বিএনপি তাদের অংশীদার করতে রাজি। ইতোমধ্যে এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও চাওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।

গত রোববার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ-এর সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকে লন্ডনে তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠক প্রসঙ্গ এবং আগামী নির্বাচনে জোট কৌশল আলোচনা হয়। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অংশ নেন।

অন্যদিকে মঞ্চের পক্ষ থেকে অংশ নেন বর্তমান সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম ও জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্যে আমরা একসঙ্গে ছিলাম। স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের সময় সেই ঐক্যেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “৩১ দফা কর্মসূচিতে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, নির্বাচনে জয়লাভের পর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া দলগুলোকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করা হবে। এটি আমাদের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি।”

এছাড়াও বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনী প্রচার শুরু হলে মাঠে থাকা শরিকরা যদি কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়ে, সেক্ষেত্রে ধানের শীষের প্রতীকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার বিপক্ষে কেউ অবস্থান নিলে, বিএনপি কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সবমিলিয়ে, বিএনপি এখন একটি নির্বাচনী ছকে নিজেদের পুরনো ও নতুন রাজনৈতিক মিত্রদের জায়গা দেওয়ার মাধ্যমে শক্তিশালী একটি জোট গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। শিগগিরই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে জানানো হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *