এবার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার নাম ‘জুলাই যোদ্ধা’ তালিকায়

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ‘জুলাই যোদ্ধা’ তালিকায় ছাত্রলীগের এক ইউনিয়ন নেতার নাম উঠে আসায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, ওই নেতা অতীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলায় জড়িত ছিলেন এবং সরকার পতনের বিরোধিতা করায় তাকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ন্যায়ের পরিপন্থী।

উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন রায়–এর নাম সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের প্রকাশিত ‘জুলাই যোদ্ধা’ তালিকায় ৩ নম্বর ক্রমিকে দেখা গেছে। অথচ, গত বছরের ৪ আগস্ট পীরগঞ্জে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশ নেন সুমন রায়। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একত্রে তিনি সেই হামলায় সক্রিয় ছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আলমগীর হোসেন সৈকত। বুধবার (২৫ জুন) বিকেলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। সৈকতের দাবি, “সুমন রায় জেল খেটেও এসেছে ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে। এখন জামিনে বেরিয়ে আবারও আওয়ামী লীগের হয়ে সক্রিয়। অথচ তাকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ বানানো হয়েছে!”

তিনি আরও বলেন, “এই পরিচয়কে ব্যবহার করে সে এলাকায় ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। যদি নাম বাদ না দেওয়া হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক আসবে।”

সুমন রায়ের রাজনৈতিক অবস্থান ঘিরে বিতর্ক রয়েছে। একদিকে তিনি আওয়ামী লীগপন্থী অনলাইন প্রচারে সক্রিয়, অন্যদিকে ‘জুলাই আন্দোলনে’ থাকার দাবি করছেন। তবে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি সরকার পতনের পক্ষে ছিলেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফোনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তার মোবাইল বন্ধ করে দেন তিনি।

ইউএনও রকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আমি এখানে কিছুদিন হলো যোগ দিয়েছি। আমার আগে তালিকা তৈরি হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তথ্য গোপন করে যদি কেউ তালিকাভুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জুলাই যোদ্ধা তালিকা একটি মর্যাদাপূর্ণ রাজনৈতিক ও নৈতিক স্বীকৃতি। সেখানে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে বিতর্কিত ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশ আন্দোলনের চেতনার প্রতি অবমাননা।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, “জুলাই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের একক অর্জন নয়। এটি ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে সার্বজনীন প্রতিবাদ। সেখানে যারা আঘাত করেছিল, তারা কখনোই যোদ্ধা হতে পারে না।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *