প্রধানমন্ত্রিত্বের সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণের প্রস্তাবে নীতিগতভাবে সম্মতি জানালেও, বিএনপি (BNP) ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি)’–এর মতো নির্বাহী ক্ষমতায় হস্তক্ষেপকারী কাঠামোর বিরোধিতা করেছে। আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed) এ অবস্থান তুলে ধরেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এনসিসির মতো কোনো বডি যদি নির্বাহী বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করে কিংবা নীতিনির্ধারণে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে সেই প্রস্তাব আমরা মানতে পারি না। এই ধরনের পর্ষদ থাকলে আমরা প্রধানমন্ত্রী মেয়াদের ১০ বছরের সীমাও মেনে নেব না।’
তিনি আরও বলেন, শুধু নির্বাহী ক্ষমতা কমিয়ে রাষ্ট্র চালানো সম্ভব নয়—গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতেই হবে। সালাহউদ্দিন স্পষ্ট করে বলেন, “যে দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি, সেদেশেই গণতন্ত্র দৃঢ় হয়।” তার মতে, দুদক (Anti-Corruption Commission) সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী না করা হলে, গণতন্ত্র কখনোই টেকসই হবে না।
তিনি প্রস্তাব দেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে। যেগুলোর আইন নেই, তাদের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন, আর যেগুলোর আইন রয়েছে, সেগুলোর সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন বিএনপি নেতা। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতার ভারসাম্য তথা ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ নিশ্চিত হবে বলে মত দেন তিনি।
গণতন্ত্রের স্বার্থে সালাহউদ্দিন বলেন, একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্য সংস্থাগুলোর শক্তিশালী ভূমিকা নিশ্চিত করাই হবে টেকসই গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত।
আজকের আলোচনায় বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আলোচনার বিষয়বস্তুতে ছিল সংবিধানের কাঠামো, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, নারী প্রতিনিধিত্ব ও এনসিসি’র কাঠামো। তবে কোনো বিষয়ে এখনো পূর্ণ ঐকমত্য তৈরি হয়নি।
এদিকে রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে বিএনপি তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে জানায়, তারা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মূলনীতি বহাল দেখতে চায়, যেখানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একইসঙ্গে কমিশনের প্রস্তাবনায় থাকা সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় সহনশীলতার নীতিগুলোকেও স্বাগত জানায় দলটি।
আলোচনার সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার (Badiul Alam Majumdar), বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান (Iftekharuzzaman) ও মো. আইয়ুব মিয়া।