পিলখানায় ২০০৯ সালে সংঘটিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের দুই পলাতক কেন্দ্রীয় নেতার জবানবন্দি ই-মেইলের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার (২৫ জুন) কমিশনের তৃতীয় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন কমিশনের সভাপতি এবং বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান (Maj. Gen. (Retd.) A L M Fazlur Rahman)।
জবানবন্দি প্রদানকারী দুই নেতা হলেন—আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক (Jahangir Kabir Nanak) এবং দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আজম (Mirza Azam)।
ফজলুর রহমান বলেন, “এই দুই পলাতক রাজনৈতিক নেতার জবানবন্দি ই-মেইলের মাধ্যমে নিয়েছি। তাঁরা সরাসরি সাক্ষাতের জন্য অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মোট ৮ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে কারাগারে, ৩ জন উপস্থিত ছিলেন সরাসরি।”
তদন্ত প্রক্রিয়ার অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ১৫৮ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে এবং আরও ৫০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সময় দায়িত্বরত ৫৫ জন সামরিক কর্মকর্তার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধানরা, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা এবং উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা। তৎকালীন আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে।
বেঁচে যাওয়া অফিসার, দণ্ডপ্রাপ্ত ও কারামুক্ত বিডিআর সদস্যদের জবানবন্দি
ঘটনার সময় বেঁচে ফেরা ১৫ জন অফিসারের সাক্ষাৎকার ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে এবং সেনা সদর থেকে আরও ৫০ জন অফিসারকে লিখিত জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫ জন বিডিআর সদস্য এবং কারামুক্ত ২৯ জন সদস্যের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও বর্ণনা বিশ্লেষণাধীন।
অসামরিক ও বেসরকারি সাক্ষ্য
কমিশন জানিয়েছে, অসামরিক পর্যায়ে ২০ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক, আমলা ও পূর্বতন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বেসরকারি পর্যায়ে ৯ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন পেশাজীবী যারা ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদান করেছেন।
আন্তর্জাতিক উৎস ও সহযোগিতা
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন ৬টি বিদেশি দূতাবাস এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তরের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া পিলখানা হত্যাকাণ্ড বিষয়ে যাদের কাছে প্রাসঙ্গিক তথ্য আছে, এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি তথ্য প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফজলুর রহমান বলেন, “আমরা চাই পিলখানা ট্র্যাজেডির সমস্ত সত্য উদঘাটন হোক। এটি শুধু ইতিহাসের দায় নয়, জাতি হিসেবে আমাদের ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকার।”