যমুনা সেতু থেকে সরানো হচ্ছে রেললাইন

দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় পর, যমুনা সেতু (Jamuna Bridge) থেকে রেললাইন সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা প্রান্ত থেকে সেতুর ওপর থাকা রেললাইনের নাট-বল্টু খুলে ফেলার কাজ শুরু করে সেতু বিভাগ। এই পদক্ষেপটি নতুন যমুনা রেলসেতু চালু হওয়ার পরপরই নেওয়া হলো, যেখানে বর্তমানে ট্রেন চলাচল করছে পূর্ণদমে।

এর আগে চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে যমুনা নদীর উপরেই নির্মিত নতুন রেলসেতু দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তিনশ মিটার দূরে সমান্তরালভাবে নির্মিত সেই রেলসেতু চালু হওয়ায়, পুরাতন সড়ক সেতুর সঙ্গে থাকা রেললাইনটির আর প্রয়োজন নেই। নতুন সেতুর পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সেতু বিভাগ পুরনো রেললাইন সরিয়ে নিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো: মাসুদুর রহমান বলেন, “রেললাইন খুলে ফেলার কাজ শুরু করেছে সেতু বিভাগ। কাজ শেষ হলে, সংশ্লিষ্ট সকল মালামাল রেল কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, “সেতু কর্তৃপক্ষ সড়ক সেতু সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যেই এই রেললাইন অপসারণ করছে।”

প্রায় ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের যমুনা সেতুটি ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পরই রেল সংযোগের দাবি ওঠে। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন রেল বিভাগ আন্দোলনের মাধ্যমে সেই দাবি জোরদার করে। সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে রেললাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সড়ক সেতুর উত্তর পাশে লোহার এঙ্গেল ব্যবহার করে একটি পৃথক রেলসেতু নির্মাণ করা হয়।

২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো যমুনা সেতু দিয়ে রেল চলাচল শুরু হয়। তবে বেশি গতির ট্রেন চলাচলের কারণে মাত্র দুই বছরের মাথায় সেতুর গঠনে ফাটল দেখা দেয়। এই ঝুঁকি এড়াতে ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয়। ফলে একটি ট্রেনকে সেতু পার হতে সময় লাগে প্রায় ২২ মিনিট, যা দুই প্রান্তে দীর্ঘ ট্রেনজটের সৃষ্টি করে।

এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আনতে সরকার ২০২০ সালে নতুন রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। জাইকার অর্থায়নে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের নতুন যমুনা রেলসেতু নির্মাণ করা হয়। অবশেষে, চলতি বছরের ১৮ মার্চ সেই নতুন সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে, পুরাতন যমুনা সেতুর রেললাইন অপসারণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নামে সেতু কর্তৃপক্ষ।

রেললাইন অপসারণের কাজ শুরু হওয়ায় পুরনো সেতুর উপর রেল চলাচলের একটি যুগের অবসান ঘটল, আর নতুন অবকাঠামোর দিকে এগিয়ে চলার এক নিদর্শন হয়ে থাকল এই ঘটনা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *