বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের বার্তা: ‘অনুকূল পরিবেশে’ বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত

বাংলাদেশের সঙ্গে নদীজল, বাণিজ্য ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারত আলোচনায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে চীন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ত্রিপক্ষীয় বৈঠককে ঘিরে ভারত বলছে, তারা ‘প্রতিবেশী অঞ্চলের ওপর নিবিড় নজর’ রাখছে। এসব বক্তব্য দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল (Randhir Jaiswal), শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বহুদিনের সম্পর্ক। আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক লাভবান হওয়া সম্ভব—তবে পরিবেশ হতে হবে অনুকূল।”

গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা একে অপরের সঙ্গে ৫৪টি নদী ভাগাভাগি করি। যৌথ নদী কমিশন (Joint Rivers Commission – JRC) রয়েছে এইসব বিষয়ে আলোচনার জন্য।” পানি নিয়ে গঠিত এ কমিশন দুই দেশেরই স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে বলেও জানান তিনি।

বাণিজ্য প্রসঙ্গে ভারতের প্রত্যাশা

বাণিজ্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রণধীর বলেন, “বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার ও পারস্পরিক সমমর্যাদার ভিত্তিতে কিছু বাণিজ্যিক চাহিদা উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা সেই ইস্যুগুলো বহুবার আলোচনায় এনেছি, এমনকি সচিব পর্যায়েও। এখন আমরা সমাধানের অপেক্ষায়।”

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে হতাশা

ঢাকার খিলক্ষেতে দুর্গা মন্দির ধ্বংসের প্রসঙ্গ তুলে ভারতীয় মুখপাত্র বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, কিছু কট্টরপন্থি সেই মন্দির ধ্বংসের দাবি করেছিল। সরকারের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথচ তা না করে উল্টো ‘অবৈধ দখলের’ অজুহাতে মন্দির ভাঙা হয়েছে। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়, তাদের সম্পত্তি ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব।”

ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে সতর্ক দিল্লি

চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক সম্পর্কে জয়সওয়াল বলেন, “আমরা প্রতিবেশী অঞ্চলের ওপর সবসময় নিবিড় নজর রাখি। কারণ এসব আমাদের নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে জড়িত।”

তিনি জানান, প্রতিটি দেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আলাদা ভিত্তির ওপর গঠিত। তবে চলমান ঘটনাপ্রবাহ বিবেচনায় নেওয়া হয়। কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করাই ভারতের লক্ষ্য।

চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা সম্মেলনের (China-South Asia Cooperation) পাশাপাশি কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত এই সাইডলাইনে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন তিন দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা।

ভারতের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তারা দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগোলিক রাজনীতিতে কোনো তৃতীয় পক্ষের অতিরিক্ত প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষত চীন-পাকিস্তান-প্রভাবিত কৌশলগত উদ্যোগ নিয়ে দিল্লির দৃষ্টি এখন আরও তীক্ষ্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *