প্রধান উপদেষ্টা-সিইসি বৈঠকের বিষয়বস্তু প্রকাশের দাবি বিএনপির সালাহউদ্দিনের

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন (A M M Nasir Uddin)–এর সাম্প্রতিক বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা জাতির সামনে স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed)। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য মনে করেন, বৈঠকের বিষয়বস্তু জনসমক্ষে এলে রাজনৈতিক আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, “আমাদের ধারণা—বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে, নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব। যদি প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসি উভয়েই জনসমক্ষে বিষয়টি পরিষ্কার করেন, তাহলে আমরা আশ্বস্ত হব।”

নির্বাচন প্রস্তুতি যথেষ্ট এগিয়েছে: সালাহউদ্দিন

সালাহউদ্দিন জানান, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগে বলা হয়েছিল জুলাইয়ের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ হবে, পরে তা সেপ্টেম্বরে গড়ায়। তবে তিনি মনে করেন, “প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয়েছে, নির্বাচনী সামগ্রী কেনা হয়েছে। বাকি যা আছে তা হলো আসন পুনর্নির্ধারণ (ডিলিমিটেশন), যা তিন মাসের মধ্যেই করা সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, “তপশিল ঘোষণার পরের কাজগুলো—পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, ট্রেনিং ইত্যাদি—সবই চলমান প্রক্রিয়া। এর জন্য আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না।”

সিইসি-প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক ঘিরে রহস্য

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, বৈঠকটি দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হলেও আলোচনার বিষয়বস্তু গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি।

এর আগে গত ১৩ জুন লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন। উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা জানান, “জুলাইয়ের গণহত্যার বিচার ও প্রশাসনিক সংস্কার সন্তোষজনক হলে ফেব্রুয়ারিতেও নির্বাচন সম্ভব।”

স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার

জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপির পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে প্রসঙ্গ আনলে, সালাহউদ্দিন বলেন, “এই দাবিগুলো রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। বাস্তবতা হলো, জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অসম্ভব। কারণ ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশন—সব স্তরে নির্বাচন করতে ছয় মাসেরও বেশি সময় লাগে।”

তিনি বলেন, “ইসি আগেও বলেছে—স্থানীয় নির্বাচন করতে গেলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সময়মতো হবে না। আর বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল এখন চায় আগে জাতীয় নির্বাচন হোক। তাই স্থানীয় নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিশ্বাস ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি

সালাহউদ্দিন জোর দিয়ে বলেন, “বিএনপির সংগ্রাম স্থানীয় নির্বাচন নয়, জাতীয় নির্বাচনের জন্য। আমরা ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আন্দোলন করেছি। এখন নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব—একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এবং নির্বাচন নিয়ে আর কোনো ধোঁয়াশা থাকবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *