মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে দাড়ি ধরে মারধর ও হেনস্তার ঘটনার চারদিন পর অভিযুক্ত ব্যক্তি নাসিম ভূঁইয়া (Nasim Bhuiyan) অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন। শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে ঢাকার আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকা থেকে তাকে আটক করে মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পুলিশ জানায়, প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযান চালিয়ে সকালে গ্রেপ্তার করা হয় নাসিমকে। তিনি ঘিওরের মোশারফ হোসেন ওরফে বাচ্চু ভূঁইয়ার ছেলে। বয়স ৪৫। পেশায় তিনি একজন টিন ব্যবসায়ী।
ঘিওর থানায় দায়ের করা মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘিওর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘মানিক কম্পিউটার’-এর মালিক আলী আজম মানিককে সবার সামনে দাড়ি ধরে মারধর করেন নাসিম। এরপর ২৪ জুন ভুক্তভোগী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
পুলিশ বলছে, আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে নাসিম ভূঁইয়াকে আদালতে পাঠানো হবে।
সিসিটিভি ফুটেজে ভাইরাল, দেশজুড়ে ক্ষোভ
এই নির্মম ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, নাসিম ভূঁইয়া একদম সামনে গিয়ে আলী আজম মানিকের দাড়ি ধরে টান দিচ্ছেন এবং পরে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করছেন।
ফুটেজটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ব্যাপক নিন্দা প্রকাশ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অবমাননার অভিযোগে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা: গুজবের ডালপালা
ঘটনার প্রকৃত প্রেক্ষাপট স্পষ্ট হলেও, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এতে জড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক গুজবও। জানা গেছে, আক্রান্ত ব্যবসায়ী আলী আজম মানিকের কোনো প্রকার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।
তবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক ফেসবুক পেজে প্রচার চালানো হয় যে, ওই ব্যবসায়ী বিএনপির কর্মী। এমনকি এসব প্রচারণায় অংশ নেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য (Pinaki Bhattacharya)।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা কেবল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে কলুষিত করছে। দাড়ি ধরে নিরীহ এক ব্যক্তিকে হেনস্তা করার মতো ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়ার প্রবণতা শুধু ন্যায়ের প্রতিবন্ধকই নয়, বরং সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অন্যতম উৎস হয়ে উঠছে।
মূল ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতে গিয়ে গুজব ছড়ানো কিংবা রাজনৈতিক লেবেল লাগিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা—এই প্রবণতা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথকে আরও কঠিন করে তোলে।
পুলিশ জানিয়েছে, দোষীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে এবং বিষয়টি রাজনৈতিক নয়, একেবারেই ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।