গুম সংক্রান্ত অভিযোগে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল (স্টাফ) মো. শফিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য বিভিন্ন সংস্থায় ডেপুটেশনে থাকে। এসব সংস্থা সেনাবাহিনীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নয়। ডেপুটেশনে থাকা কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ এসেছে। এদের নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে যদি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভুক্তভোগীদের পরিবারদের উদ্দেশে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, “যদি কেউ নিরাপত্তা চান, সেনাবাহিনী যথাযথভাবে সহায়তা দেবে।”
নির্বাচন ও আইনশৃঙ্খলা
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, “এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে সেনাবাহিনীর কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে নির্দেশনা পেলেই আমরা নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকব।”
তিনি আরও জানান, গত ৫ আগস্ট থেকে শুরু করে লুট হওয়া ৮০ শতাংশ অস্ত্র ও গুলি সেনাবাহিনী উদ্ধার করতে পেরেছে। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে, যা আসন্ন নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
মব ভায়োলেন্স ও কিশোর গ্যাং
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে হেনস্তার বিষয়ে কর্নেল শফিকুল বলেন, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছয়জনের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে জামিন পাওয়ায় সেনাবাহিনীর আর কিছু করার ছিল না।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ৪০০ জনের বেশি কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষে অলিতে-গলিতে নজর রাখা সম্ভব না হলেও তথ্য পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-পটিয়া, কুমিল্লা-মুরাদনগরের ঘটনা
চট্টগ্রামের পটিয়ায় সড়ক অবরোধের ঘটনায় সেনাবাহিনী দ্রুত গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে জনদুর্ভোগ লাঘব করে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে নারী নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় মূল আসামি ফজর আলীসহ ভিডিও ধারণকারীদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করেছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সম্মান ও সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে।
অস্ত্র উদ্ধার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি
সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীর অভিযানে ২৬টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। আগস্ট ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৯,৬৯২টি অস্ত্র এবং ২,৮৬,৮৫৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫,৬৪৬ জনকে, যার মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী এবং মাদক সংশ্লিষ্টরাও রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে গত দুই সপ্তাহে ১৩টি অস্ত্র উদ্ধার ও ২৩ জন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ইউপিডিএফ-এর একটি ক্যাম্প ধ্বংস করা হয়েছে। রাঙামাটির অভিযানে এক সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হন।
কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান ও সংঘর্ষ
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে আজ ভোরে সংগঠনটির দুই সদস্য নিহত হন। বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া অভিযানে কেএনএফের একজন ‘মেজর’ পদবির কমান্ডার নিহত হন। অভিযানে তিনটি এসএমজি, একটি চায়নিজ রাইফেল, ৩৬৪টি গুলি এবং সামরিক সরঞ্জাম ও নথিপত্র উদ্ধার হয়।
এই অভিযানের ফলে কেএনএফের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া বান্দরবানের ১৩৮ জন বম উপজাতি ঘরে ফিরেছেন। সেনাবাহিনী তাঁদের পূর্ণ সহায়তা করছে।