যুক্তরাজ্যের সংসদে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামের প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচি পরিচালনাকারী সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে ভোট দিয়েছেন ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddiq)। বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ৩৮৫ জন এমপি প্রস্তাবের পক্ষে রায় দেন, যেখানে মাত্র ২৬ জন ছিলেন বিপক্ষে। লন্ডনভিত্তিক ইসলামি গণমাধ্যম ফাইভ পিলারস জানায়, টিউলিপসহ কয়েকজন মুসলিম এমপি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দিলেও অধিকাংশ মুসলিম এমপি এই বিতর্কিত ভোটে অংশ নেননি।
২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন (Palestine Action)’ মূলত যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলি অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি ‘এলবিট সিস্টেমস’-এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। গত মাসে তারা ব্রিটেনের একটি সামরিক ঘাঁটিতে প্রবেশ করে দুটি বিমানে লাল রঙ ছিটিয়ে প্রতিবাদ জানায়। ব্রিটিশ সরকার দাবি করেছে, সংগঠনটির কর্মকাণ্ডে ইতোমধ্যে মিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতি হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-কে আইনত এখন আল-কায়েদা ও আইএসের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের কাতারে ফেলা হয়েছে। যার মানে হলো—সংগঠনটিকে সমর্থন করা, তাতে অর্থ দেওয়া বা এর সদস্য হওয়া এখন থেকে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
তবে এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় ওঠে ব্রিটিশ রাজনৈতিক ও মানবাধিকার অঙ্গনে। পার্লামেন্টের স্বতন্ত্র এমপি জারা সুলতানা (Zarah Sultana) কটাক্ষ করে বলেন, “একটি স্প্রে ক্যানকে আত্মঘাতী বোমার সঙ্গে তুলনা করা শুধু হাস্যকরই নয়, এটি আইনকে অপমান করার শামিল।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-র প্রধান নির্বাহী সাচা দেশমুখও এই সিদ্ধান্তকে ‘আইনের নজিরবিহীন অপব্যবহার’ বলে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এই ক্ষমতার অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সরকার এখন গ্রেপ্তার, বাকস্বাধীনতা দমন ও নজরদারির মতো পদক্ষেপ নিতে পারবে।
‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নিজেরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছে এবং এটিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার বলে অভিহিত করেছে। এরই মধ্যে সংগঠনের কর্মীরা ব্রিস্টলের এলবিট সাইটের প্রবেশপথ অবরোধ করেছেন এবং সাফোকের একটি ভবনের ছাদ দখল করে রেখেছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরাও যুক্তরাজ্যকে এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাদের মতে, প্রাণহানি বা সহিংস উদ্দেশ্য ছাড়া কেবল সম্পত্তির ক্ষতি হলে তা সন্ত্রাসবাদ হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াভেট কুপার (Yvette Cooper) অবশ্য সরকারের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সহিংসতা এবং অপরাধমূলক ক্ষতিসাধনের কোনও স্থান গণতান্ত্রিক প্রতিবাদে নেই। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা জরুরি।”
এদিকে, কট্টর বিরোধিতার মাঝেও অনেক এমপি এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য হন। আলজাজিরা জানায়, একই প্রস্তাবে তিনটি সংগঠন অন্তর্ভুক্ত থাকায় একটি বাদ দিলে বাকিগুলোকেও নিষিদ্ধ করা যেত না—এই জটিলতা বিবেচনায় অনেক এমপি সমর্থনে ভোট দেন, যদিও ব্যক্তিগতভাবে হয়তো তাঁরা পুরোপুরি একমত ছিলেন না।