পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়ন-এ ‘লনারেবল উইমেন বেনিফিট’ (ভিডব্লিউবি) কার্ড বিতরণ নিয়ে একদিকে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ, অন্যদিকে এক নারীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অডিও ভাইরাল হয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী নেতা আকরাম হোসেন পলাশ, যিনি ইউনিয়ন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক।
অডিও ফাঁস ও বিতর্ক
সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ফোনালাপে শোনা যায়, একজন নারী ফোন করতেই এক পুরুষ কণ্ঠ বলেন, “কে?” পরিচয় পেয়ে কণ্ঠটি বলে ওঠে, “আপনাকে বলেছি ভাবী, আমার সঙ্গে দেখা করেন। একটু কোলাকুলি করি, আর কাজটাও করে দিই… আমার কি ভাবীর সঙ্গে… (প্রকাশযোগ্য নয়) ইচ্ছা হয় না?” ফোনালাপের পুরুষ কণ্ঠটি যে জামায়াত নেতা আকরাম হোসেন পলাশের, এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন উঠেছে। বিশেষ করে অডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর দেবোত্তর ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকায় সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে।
ঘুষের অভিযোগও
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিটি ভিডব্লিউবি কার্ডের জন্য দুই হাজার টাকা করে ঘুষ আদায় করা হচ্ছে। যা বিশেষ করে দরিদ্র নারীদের জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত এই সুবিধার সার্বিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অনেক সুবিধাভোগী নারী ও পরিবার এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অভিযুক্ত নেতার পরিচয় ও প্রতিক্রিয়া
আকরাম হোসেন পলাশ পাবনার দেবোত্তর ইউনিয়ন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক। তিনি শ্রীকান্তপুর গ্রামের মো. আলাউদ্দিন খানের ছেলে এবং পাবনা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা জহুরুল ইসলাম খানের ভাতিজা।
তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পলাশ। তার ভাষ্য, “অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।”
প্রশাসনের অবস্থান
দেবোত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রতন মোল্লা জানান, ইউনিয়নে মোট ৩৪০টি ভিডব্লিউবি কার্ড বরাদ্দ থাকলেও, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুপারিশে জামায়াত নেতাদের হাতে ১৮টি কার্ড দেওয়া হয়। বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রশাসনিক আলোচনায় এসেছে।
আটঘরিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ পাল বলেন, “এই কার্ড নিয়ে যদি কেউ দুর্নীতি করে, তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এছাড়া আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “গত ৭ জুলাই ওই নারী আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন এবং অডিও শুনিয়েছেন। চাইলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।”
বর্তমানে পুরো আটঘরিয়া জুড়ে এ ঘটনা নিয়ে চলছে তীব্র আলোচনা, স্থানীয় রাজনীতিতে নেমেছে নতুন উত্তেজনার ছায়া।