১ কোটি ৪০ লাখ প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিতে পোস্টাল ব্যালটে জোর

বিশ্বের নানা প্রান্তে বসবাসরত প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর অনীহার কারণে ‘প্রক্সি পদ্ধতি’ থেকে সরে এসে আপাতত আইটি নির্ভর পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

ইতোমধ্যে সীমিত পরিসরে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে ভোটারদের পোস্টাল ব্যালট পাঠানো ও তা ফেরত নেওয়ার কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পরিকল্পনা করছে ইসি। এই লক্ষ্যে ২৪ জুন ডাক বিভাগ, ফেডএক্স, ডিএইচএল ও অন্যান্য কুরিয়ার সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।

এতে উঠে আসে, সরকারি ডাক বিভাগের মাধ্যমে একজন ভোটারের ব্যালট পেপার প্রবাসে পাঠানো ও ফেরত আনতে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা ব্যয় হতে পারে। অপরদিকে বেসরকারি কুরিয়ার সংস্থাগুলোর হিসেবে এই খরচ ৪০-৪৫ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৫ হাজার টাকা

এ খরচ ইসির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থায় ভোটারপ্রতি ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে বলে জানা গেছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন (Chief Election Commissioner Nasir Uddin) গত ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এই অর্থনৈতিক বাস্তবতার দিকটি তুলে ধরেন। এ ছাড়া, কমিশনের একজন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত একটি অ্যাডভাইজরি কমিটি সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত ও কাঠামোগত জটিলতা যাচাই করছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ (Abdur Rahmanel Mashud) বলেন, “অনলাইনে ভোটদান বিষয়ে ইসির একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। সীমিতভাবে পাইলট প্রকল্প চালুর সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে জাতীয় নির্বাচনে এটি এখনই বাস্তবায়ন কঠিন।”

তিনি আরও জানান, ভারতসহ অনেক দেশ অনলাইন পদ্ধতি চালু করলেও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি। তাই বাংলাদেশেও প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

একইসঙ্গে, ‘প্রক্সি পদ্ধতি’ সহজ ও সাশ্রয়ী হলেও মাত্র ৮টি রাজনৈতিক দল এর পক্ষে মত দিয়েছে বলে জানায় ইসি। অপরদিকে, ১৮টি দল অনলাইনে ভোট১৫টি দল পোস্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানের পক্ষে মত দিয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে আরপিও অনুযায়ী বিদ্যমান পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থাকেই এগিয়ে নিতে চায় কমিশন।

প্রসঙ্গত, ১৬ ডিসেম্বর এক ঐতিহাসিক ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। এরপর ৮ ও ২৯ এপ্রিল দুই দফায় অনুষ্ঠিত কর্মশালা ও সেমিনারে এই বিষয়ে আলোচনা হয়।

বর্তমানে দেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ, যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ প্রবাসে থাকেন বলে ইসির হালনাগাদ তালিকায় জানানো হয়েছে। নতুন তালিকা অনুযায়ী এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক মো. আব্দুল মমিন সরকার জানান, “অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করাই এখন মূল লক্ষ্য।”

একইসঙ্গে, ইসি তিনটি প্রতিষ্ঠান—বাংলাদেশ এক্সপ্রেস কোম্পানি লিমিটেড, মার্ক লাইন এন্টারপ্রাইজ, ও ডিএইচএল ওয়ার্ল্ডওয়াইড এক্সপ্রেস (বাংলাদেশ)—কে চিঠি দিয়ে ব্যালট পাঠানো-আনার আনুমানিক খরচ চেয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যালট পেপারের ওজন ১২ গ্রাম এবং প্যাকেটসহ ৫০ গ্রাম হবে। সে অনুসারে খরচের হিসাব চেয়ে পাঠানো হয়।

সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন এখন একটি যুগান্তকারী পরীক্ষার মুখোমুখি, যেখানে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অর্থ, প্রযুক্তি এবং রাজনৈতিক সমর্থন—সব মিলিয়ে ভারসাম্য রাখতে হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *