নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিএনপি (BNP), জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি সহ দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হলেও, প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দলে দলে ভিন্নমত রয়েছে। এই পটভূমিতে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ দুটি বিকল্প পদ্ধতির প্রস্তাব দিয়েছে, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা ও বিতর্ক।
প্রথম ফর্মুলায় বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে ৭ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন হবে, যেখানে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, উচ্চকক্ষের দুই পক্ষের মনোনীত সদস্য এবং অন্যান্য বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি।
এই কমিটি দল ও জোটভিত্তিক সর্বমোট ১৪ জন প্রার্থী তালিকা পাবে। নামগুলো নিয়ে শুনানি হবে, যাতে উচ্চকক্ষের সদস্যরা অংশ নেবেন। এরপর উভয় পক্ষ তাদের তালিকা থেকে একে অপরের একজন করে প্রার্থী বাছাই করবে এবং অন্যান্য প্রস্তাবিত নাম থেকেও একজন করে নির্বাচন করা হবে।
যদি অভিন্ন ব্যক্তি উঠে আসে, তবে তাকেই প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করা হবে। নাহলে, ‘র্যাঙ্ক চয়েজ’ পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে একজনকে নির্বাচিত করবেন উচ্চকক্ষের সদস্যরা। নির্বাচিত ব্যক্তিকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শপথ করাবেন রাষ্ট্রপতি। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৯০ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে এবং সর্বোচ্চ ১৫ জন উপদেষ্টা নিয়ে গঠিত হবে।
তবে এই পদ্ধতিতে বিএনপি এনসিসি (জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল)-এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে দ্বিতীয় ফর্মুলায় আরও সরল পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।
এই ফর্মুলায়, সংসদ ভাঙার ৯০ দিন আগে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠিত হবে। কমিটির কাছে প্রত্যেক দল প্রধান উপদেষ্টার নাম প্রস্তাব করবে। পর্যালোচনা শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতিতে একজনকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য।
যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন না পাওয়া যায়, তখনও ‘র্যাঙ্ক চয়েজ’ ভোটিংয়ের মাধ্যমেই একজনকে চূড়ান্ত করা হবে।
ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়ক এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেছেন, “এই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া নাম থেকেই একজন নির্বাচিত হবেনই, কোনো অবস্থায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে না।”
তিনি আরও জানান, কমিশনের প্রস্তাবই শেষ কথা নয়—রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব প্রস্তাবও আলোচনায় আসবে। সব পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই একটি চূড়ান্ত পদ্ধতি নির্ধারিত হবে।