উচ্চকক্ষ গঠনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে আজ বিকল্প প্রস্তাব আনছে ঐকমত্য কমিশন

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপে পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে বিএনপির আপত্তির কারণে নতুন বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission)। সোমবারের সংলাপের আলোচ্যসূচি অনুযায়ী, কমিশনের বিকল্প প্রস্তাবে ৬৪ জেলা ও ১২ সিটি করপোরেশন থেকে নির্বাচিত ৭৬ জন জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

কমিশনের মূল প্রস্তাব ছিল, বিদ্যমান ‘এফপিটিপি’ পদ্ধতিতে ৪০০ সদস্যবিশিষ্ট নিম্নকক্ষ গঠিত হবে এবং সেই নির্বাচনে দল যে অনুপাতে ভোট পাবে, ১০০ আসনের উচ্চকক্ষে তত অনুপাতে (পিআর) আসন পাবে। বিএনপির মিত্র সংগঠন যেমন গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য ও জেএসডি এ প্রস্তাবে একমত হলেও বিএনপি এতে সায় দেয়নি। তারা চায়, উচ্চকক্ষেও আসন বণ্টন হোক সংসদের নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু হলে ভবিষ্যতে কোনো দল দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাবে না। ফলে সংবিধানের কোনো সংশোধনের দরকার হলে তা সরকারের হাতে থাকবে না এবং যে কোনো প্রয়োজনীয় সংশোধনই সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলো বলছে, অতীতে সরকার ৪০-৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ আসন দখল করে সংবিধান ইচ্ছেমতো সংশোধন করেছে। তারা মনে করে, পিআর পদ্ধতিতেই উচ্চকক্ষ গঠনের মাধ্যমে এমন একচ্ছত্র ক্ষমতা রোধ করা যাবে। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের কমিশনের বিকল্প প্রস্তাবকে সরাসরি “পাগলামি” বলে অভিহিত করেছেন।

সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ২৮টি দল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে। এর মধ্যে বেশ কিছু দল পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের ব্যাপারে একমত হলেও বিএনপি এবং সমমনা দলগুলি এ বিষয়ে অনড়।

কমিশনের সূত্র জানিয়েছে, বিকল্প প্রস্তাব এসেছে বিএনপিকে কোনোভাবে ভাবেই এই প্রক্রিয়ায় ধরে রাখতে। প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষে জেলার জনগণ কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিতে পারেন—এই পদ্ধতির চূড়ান্ত কাঠামো নিয়ে এখনো আলোচনা বাকি। তবে সংশ্লিষ্ট দলগুলো এটিকে গ্রহণযোগ্য বলছে না।

রাজনৈতিক সূত্র জানায়, পিআর পদ্ধতি, উচ্চকক্ষ ও সাংবিধানিক নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে একমত হতে বৃহস্পতিবার রাতে সরকার, বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির নেতাদের নিয়ে একটি ‘অঘোষিত বৈঠক’ও হয়। তবু আপসের কোনো সুর মেলেনি। বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট জানান, বিএনপি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ মানবে না। বরং প্রয়োজন হলে উচ্চকক্ষই থাকবে না।

এই অবস্থানে আরও দৃঢ়তা এনে জামায়াত, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলন জানায়, পিআর প্রশ্নে তারা কোনো ছাড় দেবে না। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন বলেন, “উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি এবং প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ—এ দুটো মৌলিক সংস্কার। এনসিপি এ বিষয়ে অবস্থান বদলাবে না।”

এই প্রক্রিয়া ঘিরে এখন রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও প্রকট হচ্ছে। ঐকমত্য না হলে সংসদ কাঠামোর সংস্কার বা উচ্চকক্ষ গঠনের উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *