মুজিববাদের কবর গোপালগঞ্জে নয়, শেখ হাসিনার ১৭ বছরেই দেওয়া হয়েছে: এ্যানি চৌধুরী

‘মুজিববাদের কবর তো গত ১৭ বছর শেখ হাসিনাই দিয়েছে, গোপালগঞ্জে গিয়ে দিতে হবে না’—এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। শুক্রবার (১৮ জুলাই) লক্ষ্মীপুরে আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি সরকারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করে বলেন, গত ১৭ বছর ধরে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের ওপর গুম, খুন ও নির্যাতন চালিয়ে এসেছে।

লক্ষ্মীপুর বালিকা বিদ্যা নিকেতন মাঠে জেলা বিএনপির আয়োজিত এই স্মরণসভায় এ্যানি বলেন, “এই প্রশাসন এখন ইউনুস সাহেবের প্রশাসন। আমরা তো সহযোগিতা করছি, আন্দোলনের ফসল হিসেবে সমর্থন দিচ্ছি। অথচ সরকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেনি, সন্ত্রাসীদের ধরার অভিযান পর্যন্ত চালায়নি।” তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর সরকারের উচিত ছিল জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি এনসিপির সাম্প্রতিক ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচির হঠাৎ পরিবর্তন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, “এই পরিকল্পনার পেছনে কোনো হীন উদ্দেশ্য আছে কি না, তা তলিয়ে দেখা দরকার। সামনে নির্বাচন, এ রকম গণ্ডগোল হলে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।”

এনসিপিকে উদ্দেশ করে এ্যানি বলেন, “মুজিববাদের কবর দিতে হলে গোপালগঞ্জ যেতে হবে না। মুজিববাদের কবর তো ’৭২, ’৭৩, ’৭৪, ’৭৫ এ হয়েছে, আর সর্বশেষ ১৭ বছর শেখ হাসিনার শাসনেই তা চূড়ান্ত হয়েছে।” তিনি বলেন, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মুজিববাদের কবর রচিত হয়েছে, গোপালগঞ্জে গিয়ে নতুন করে কিছু করার দরকার নেই।

গোপালগঞ্জে সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে তিনি বলেন, “সকালবেলায় ইউএনও ও পুলিশের গাড়ি নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে। সুতরাং চিন্তা করা দরকার ছিল, এরপর কী কর্মসূচি দেওয়া উচিত। তাৎক্ষণিকভাবে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল।”

তিনি আরও দাবি করেন, গোপালগঞ্জে গত এক বছরে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। “৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনী সেখানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, তাদের সাজোয়া যানে আগুন দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসীরা মিছিল করেছে অস্ত্র-সজ্জিত হয়ে, এমনকি প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছে,” বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ্যানি চৌধুরী নিজেই। সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া (Abul Khair Bhuiyan)। তিনি বলেন, “দেশের সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার কোনো ষড়যন্ত্র দেশের জনগণ মেনে নেবে না।”

তিনি আশ্বাস দেন, তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারই দেশের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার আনবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির সহ-শিল্প ও বাণিজ্যিক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি (Wahid Uddin Chowdhury Happy), জেলা বিএনপির সদস্য নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মনিরুল ইসলাম হাওলাদার ও রায়পুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক এবিএম জিলানী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *