“গড়ার বদলে ভাঙাতেই ব্যস্ত সবাই: অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সমালোচনামূলক মন্তব্য”

দেশজুড়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনার পটভূমিতে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারবিষয়ক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam) দেশ গঠনের চেয়ে ধ্বংসের প্রবণতা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিশ্লেষণধর্মী পোস্টে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “অনেকেই এখনো ভাঙার কাজে ব্যস্ত। কিন্তু গড়ার কাজে কাউকে পাওয়া যায় না।”

তিনি বলেন, “পুরোনো বন্দোবস্ত মচকে গেছে। এখন আর এটাকে ভাঙা যাবে না। বরং ভাঙতে গেলে আরও বেঁকে যাবে, বেঁকে যাচ্ছে। আবার সময় আসবে, তখন ভাঙা যাবে। কিন্তু এক্ষণে গড়ার কাজে আমাদের মনোনিবেশ করা উচিত।”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কেবল সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতার একটি দৃশ্যপট উপস্থাপন করেননি, বরং একটি বৃহত্তর নৈতিক বার্তাও দিয়েছেন—রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ নয়, এই মুহূর্তে চাই সমবেতভাবে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের উদ্যোগ।

মাহফুজ আলমের পোস্টে সামাজিক সমতা, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার প্রয়োজনীয়তাও উঠে এসেছে স্পষ্টভাবে। তিনি লেখেন, “সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারে সহযোগিতা করুন। কিন্তু, নাগরিক হিসাবে সবাই মানবাধিকারের পক্ষে থাকুন। কোনো এলাকাকে ‘ঘেটো’ (Ghetto) বানানোর চেষ্টা করবেন না।”

তিনি আরো বলেন, “গোপালগঞ্জ (Gopalganj)-এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নিম্নবর্গের হিন্দু। তারা লীগের আমলে নিপীড়িত ও বঞ্চিত হয়েছেন। আমাদের উচিত, বাংলাদেশজুড়ে লীগের হাতে নিপীড়িত ও বঞ্চিতদের সঙ্গে মৈত্রী করা।”

রাজনৈতিক মূল্যবোধের দিক থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবসানের ব্যাখ্যাও দেন মাহফুজ। তিনি মন্তব্য করেন, “হাসিনার পরাজয় রাজনৈতিক না কেবল, নৈতিক ও বটে। নৈতিক পরাজয়ের পর তার রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছিল। ফলে, আমরা হাসিনার বিরুদ্ধে গিয়ে নৈতিক উচ্চতা হারাতে পারি না।”

তিনি মনে করেন, গণঅভ্যুত্থানের পর যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল—সেখানে মানবিক মর্যাদা, বৈষম্যহীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখনো পূরণ হয়নি। এবং এটি পূরণ করাই এখন সময়ের দাবি।

তার বক্তব্যে আত্মসমালোচনার সুরও অনুপস্থিত নয়। তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের অপ্রস্তুতি ছিল, বিহ্বলতা আর অনভিজ্ঞতা মিলে আমরা ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তের পূর্ণাঙ্গ বিলোপ ঘটাতে পারিনি।” তবে তিনি এটিকে শেষ বলেই দেখছেন না। বরং তার মতে, এখনই সময় রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের সুসংগঠিত করে একটি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার।

সামগ্রিকভাবে মাহফুজ আলমের পোস্টটি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রজ্ঞাপূর্ণ, কিন্তু স্পষ্ট অবস্থান প্রকাশ করেছে। এই বক্তব্য ক্ষমতার ভারসাম্য ও ভবিষ্যতের রাষ্ট্রগঠনের জন্য নীতিগত দিকনির্দেশনা হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *