আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা বোঝার জন্য রাজধানী ঢাকায় ‘মক ভোটিং’ আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার মহড়ার মতো এই কার্যক্রমে থাকবেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট, ভোটার এবং ফলাফল গণনার পূর্ণাঙ্গ আয়োজন। তবে এতে কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা প্রার্থীর নাম ও প্রতীক ব্যবহার করা হবে না।
ইসির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আশপাশের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ২৯ নভেম্বর, শনিবার এই ‘মক ভোটিং’ অনুষ্ঠিত হবে। সম্ভাব্য স্থান হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আগারগাঁও তালতলা কলোনি সরকারি স্কুল ও কলেজ’ অথবা ‘শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’। ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। দুটি কক্ষে ভোট গ্রহণ হবে—একটি নারী এবং অপরটি পুরুষ ভোটারদের জন্য।
এই মহড়ায় অংশ নেবেন প্রায় ১,১০০ জন ভোটার। তাদের মধ্যে থাকবেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ৬০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ২০০ জন নতুন ভোটার, ১০০ জন বয়স্ক ভোটার এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বস্তিবাসীরাও। নতুন ভোটার সংগ্রহ করা হবে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এবং বস্তিবাসীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অংশগ্রহণকারীদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থাও থাকবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ (KM Ali Newaz) জানান, “তফসিল ঘোষণার আগেই অল্প সময়ের মধ্যে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণে আসলে কত সময় লাগে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা যায় কি না—এসব যাচাই করতেই এই ব্যবস্থা।” তার মতে, এই মহড়ার মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে প্রয়োজনে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের গণ-আন্দোলনের পর দায়িত্ব নেওয়া সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন (CEM Nasir Uddin)-এর নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন এখনও কোনো নির্বাচন আয়োজন করেনি। নির্বাচন পরিচালনায় অভিজ্ঞতা নিতে আগ্রহী এই কমিশনাররা বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করলেও, সরাসরি নির্বাচন পরিচালনার সুযোগ পাননি। এ কারণেই এক কমিশনারের প্রস্তাবে এই মক ভোটিং আয়োজন করা হচ্ছে।
এই মক ভোটিংয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনায়। একজন ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে কী ধরনের সমস্যায় পড়েন, একজন ভোট দিতে ঠিক কত সময় লাগে, গর্ভবতী নারী, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কী বিশেষ ব্যবস্থা দরকার—এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করবেন কমিশনাররা। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি ভোটকক্ষে কতজন ভোটার থাকা উচিত—সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।
ইসির হিসাব অনুযায়ী, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতি ৫০০ জন নারী এবং ৬০০ জন পুরুষ ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ বরাদ্দ থাকবে। শতভাগ ভোটার উপস্থিত হলে একজন পুরুষের গড়ে ৪৮ সেকেন্ড এবং নারীর জন্য ৫৮ সেকেন্ড সময় বরাদ্দ থাকবে। এই হিসাব বাস্তবসম্মত কি না, সেটি যাচাই করা হবে মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে। যদিও ইসির প্রত্যাশা—৭০ শতাংশের মতো ভোটারই নির্বাচনে অংশ নেবেন।
তবে, মক ভোটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় গণভোটের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়নি। সরকার যদি সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সেটিও এই মহড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই ভোটিং কার্যক্রম বাস্তবায়নে অর্থায়নের জন্য ইউএনডিপি (UNDP) এবং আইএফইএস (IFES)-এর কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।


