ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। তবে এবারও আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে আওয়ামী লীগসহ মোট সাতটি দলকে। যদিও সংলাপে ডাক না পেলেও, এসব দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে—এমন ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন নিজেই।
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় তাদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। একইভাবে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি (Jatiya Party), জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন এবং বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
এর আগেও এ দলগুলোকে ডাকেনি কমিশন—না প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে, না জাতীয় ঐকমত্য কিংবা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার সংক্রান্ত আলোচনায়। ১৪ দলীয় জোটের শরিকরাও থেকেছে এই বৃত্তের বাইরে।
তবে সংলাপে না ডাকা দলগুলোর নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার (Anwarul Islam Sarkar) স্পষ্ট বলেন, “নিবন্ধিত দলের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে তো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিই নাই। কমিশন তো বলেনি যে নিবন্ধন থাকার পরেও তারা আসতে পারবে না।”
তবে এসব দল কেন সংলাপে আমন্ত্রিত হলো না—এমন প্রশ্নের সোজা উত্তর দেননি আনোয়ারুল ইসলাম। তার ভাষ্য, “নিবন্ধিত দলের মধ্যে আরও কিছু দল বাকি আছে। নতুন কিছু দলও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। নিষ্পত্তির পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব—সংলাপ হবে কি না।”
এদিকে, গণঅধিকার পরিষদ (Gonoadhikar Parishad) লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছে—জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকদের সংলাপে না ডাকা হোক এবং তাদের নির্বাচনের বাইরে রাখা হোক। তারা আরও বলেছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কারও যেন এবার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না দেওয়া হয় এবং আওয়ামী লীগপন্থীদের যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়।
ইসির সংলাপ প্রক্রিয়ার আগে আচরণবিধি ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের বিরুদ্ধেও সমালোচনার ঝড় তোলে বেশ কিছু দল। অভিযোগ—তাদের সঙ্গে আলোচনায় না গিয়ে একতরফাভাবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বেশিরভাগ দলই। পাশাপাশি ইসিকে “শক্ত অবস্থানে” থাকারও পরামর্শ দিয়েছে তারা।
সংলাপপর্বে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির (Bangladesh Labour Party) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি দাবি করেন, এনপিসিকে শাপলা কলি প্রতীক দিয়ে তাদের কাছে “আত্মসমর্পণ” করেছে নির্বাচন কমিশন।
এই প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “সংলাপে নানা সমালোচনা এসেছে। সুপারিশের পক্ষে-বিপক্ষে মত উঠে এসেছে। কেউ বলেছে নজির সৃষ্টি হয়েছে, কেউ আবার বলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ হয়েছে। এ রকম অবস্থায় কোনটা মাপকাঠি হবে, তা নির্ধারণ কঠিন।”
সংলাপে দলগুলোর পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে:
– রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ;
– প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েন;
– লটারির মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের রদবদল;
– নির্বাচনী পোস্টারে শুধু দলীয় প্রধানের ছবি;
– গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের আলাদা বুথ ও গণনার নিয়ম;
– সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় প্রার্থিতা বাতিল;
– সাইবার মনিটরিং ও ফ্যাক্টচেক ইউনিট গঠন;
– জামানতের টাকা কমানো;
– কালো টাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ;
– নির্বাচনকালীন স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ইসির অধীনে আনা;
– ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন;
– একদিনে নয়, একাধিক দিনে ভোট গ্রহণ;
– ভোটার নিরাপত্তা জোরদার;
– আচরণবিধি নিশ্চিতকরণ;
– বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান থেকে পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসার না নেওয়া;
– ৩০০ আসনেই ‘না’ ভোটের বিধান রাখা।
এই সুপারিশগুলো নির্বাচন কমিশনের বিবেচনার জন্য উত্থাপন করা হলেও, কোন কোনটি কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে সংলাপে বাদ পড়া দল ও সংশোধিত নিয়মনীতি নিয়ে বিতর্ক থেমে নেই।


