‘শিশুদের মৃতদেহ ইচ্ছে করে ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে, এমন কুৎসিত প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন’: জুলকারনাইন সায়ের

বাংলাদেশ বিমানবাহিনী (Bangladesh Air Force)-এর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হয়ে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তাতে এখন পর্যন্ত ২২ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ, আহত ও নিখোঁজদের খোঁজে চলেছে টানা উদ্ধার অভিযান। কিন্তু মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে নানা গুজব, যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত একটি— “শিশুদের মরদেহ গোপন করা হচ্ছে।”

এই প্রচারণার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের (Zulkarnain Saer)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া একটি পোস্টে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, “আপনারা কেন বা কী কারণে এই ধরনের ভয়াবহ গুজব ছড়াচ্ছেন?” তিনি এ ধরনের গুজবকে ‘নোংরা-কুৎসিত পরিকল্পনা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সায়ের লেখেন, “আমার বাচ্চারা যদি ঠিক সময়ে বাসায় না ফেরে, আমার স্ত্রী আর আমি দুজনেই অস্থির হয়ে যাই। এটা প্রতিটি বাবা-মায়ের অনুভব— সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্নতা। আজকের মর্মান্তিক ঘটনায় যেসব শিশু ও শিক্ষক প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই পরিবার ও স্বজন রয়েছেন। কোনো মা-বাবা তাঁদের সন্তান নিখোঁজ হলে নিশ্চিন্তে ঘরে বসে থাকতে পারেন— এমন চিন্তা অবাস্তব।”

তিনি আরো বলেন, “পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই যা সন্তান হারানো এক মা-বাবাকে ঠেকাতে পারে খুঁজতে বের হওয়ার হাত থেকে। আমি নিজেও একজন বাবা, এই কল্পনাও আমাকে দিশেহারা করে দেয়।”

সায়ের দাবি করেন, তিনি গত চার ঘণ্টায় আহত ২৩ জন শিশুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এদের মধ্যে যেসব অভিভাবক প্রথমে সন্তানদের স্কুলে পাননি, তারা পরে বিভিন্ন হাসপাতালে তাঁদের সন্তানদের শনাক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “মৃত কারও পরিবারের সাথে কথা বলার মতো সাহস আমার হয়নি।”

সায়েরের বক্তব্যের মূল লক্ষ্য, গুজবকারীদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা— “আপনারা আসলে কার স্বার্থে এই ধরনের তথ্য ছড়াচ্ছেন? এমন সময়ে যখন পরিবারগুলো শোকস্তব্ধ, তখন মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে কাকে বা কী উদ্দেশ্য সাধন করতে চাইছেন?”

পোস্টের শেষাংশে সাংবাদিক সায়ের নিখোঁজ শিশুদের প্রকৃত অভিভাবকদের উদ্দেশে অনুরোধ জানান, “যদি সত্যিই কোনো সন্তান বা নিকটজন এখনও খুঁজে না পাওয়া যায়, তবে তার পরিবার সরাসরি বিষয়টি জানাক। কোনো তৃতীয়পক্ষ নয়, কেবল সংশ্লিষ্ট পরিবারই যেন এটি প্রকাশ করে।”

সায়ের কঠোরভাবে আহ্বান জানান, যদি প্রকৃতভাবে এমন কিছু না ঘটে থাকে, তাহলে যেন এই দুঃখজনক ঘটনার পবিত্রতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস বন্ধ করা হয়। তাঁর ভাষায়, “এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা— দয়া করে এটিকে কোনো কুৎসিত এজেন্ডার হাতিয়ার বানাবেন না।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *