দেশে স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করে একাত্তরের স্মৃতি ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir)। তিনি বলেছেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাকে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি স্বাধীন সত্ত্বা দিয়েছে। এজন্যই আজ আমরা অস্তিত্ব ধরে রাখতে পেরেছি। আবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের শহীদরা আমাদের গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই দুইটি সত্য সব সময় মাথায় রাখতে হবে।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সভায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্মান জানানো হয়। বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) ভার্চুয়ালি যুক্ত হলে উপস্থিতরা উলুধ্বনি ও ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি হাত নেড়ে সাড়া দেন।
ঐক্যের ডাক ও উগ্রবাদ নিয়ে সতর্কবার্তা
মির্জা ফখরুল তাঁর বক্তব্যে নতুন করে উগ্রবাদ নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “দেশে এখন বলা হচ্ছে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। একে যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায় তবে বাংলাদেশের আত্মা টিকবে না। এজন্য বিভক্তির রাজনীতি থেকে সরে এসে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, অতীতে বিভাজন যা হয়েছে তা ভুলে গিয়ে দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। “বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখতে হবে, সামনে এগিয়ে নিতে হবে, উন্নত করতে হবে—এটা শুধু রাজনৈতিক দলের নয়, বরং সব নাগরিকের দায়িত্ব।”
বিদেশে সম্পদ পাচারের অভিযোগ
অভিযোগের সুর আরও তীব্র করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৫ বছরে জনগণের ভোট নিয়ে যারা ক্ষমতায় থেকেছেন তারা জনগণকে বন্ধু নয়, বরং প্রজা ভেবেছেন। “অত্যাচার-নির্যাতনের পাশাপাশি দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছেন।”
চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি ব্যাংককে গেলে তিনি আওয়ামী লীগের বিতাড়িত কিছু নেতাদের বিলাসী জীবনযাপনের খবর শোনেন বলে জানান। তাঁর ভাষায়, “ব্যাংককের অভিজাত এলাকায় বাড়ি ভাড়ার ধুম পড়েছে। সেই বাড়িগুলো ভাড়া করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। যেসব গাড়ি কিনছেন, একেকটির দাম দুই-তিন কোটি টাকার নিচে নয়। এসব অর্থ আসছে কোথা থেকে? দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করেই।”
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে দিয়েছে এবং প্রায় ৮৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। “আজ অর্থনীতির যে করুণ চিত্র, তা প্রমাণ করে দেশের ভাণ্ডার শূন্য হয়ে গেছে। একজন অর্থনীতিবিদ আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, জনগণ যদি তোমাদের দায়িত্ব দেয়, তবে রাষ্ট্র চালাবে কোন সম্পদ দিয়ে? এই বাস্তবতাই দেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে।”