ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার সাবেক আ. লীগ নেতা কৃষ্ণ চন্দ্র এখন এনসিপির নেতৃত্বে

রংপুরে রাজনীতির অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার এবং দলীয় কার্যক্রম থেকে বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষ্ণ রঞ্জন বর্মন স্বাধীন (Krishna Ranjan Barman Swadhin) হঠাৎ করেই নতুন রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পাটি-এনসিপিতে (NCP)। তাকে সম্প্রতি রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করনী ইউনিয়ন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।

১৮ আগস্ট সদর উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী তওহিদ হোসেন সাদ্দাম (Towhid Hossain Saddam) ও প্রথম যুগ্ম সমন্বয়কারী আলমগীর হোসেনের স্বাক্ষরে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই তালিকায় স্বাধীনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করার খবর প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কৃষ্ণ রঞ্জন বর্মন স্বাধীন ছিলেন রংপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সদ্যপুষ্করনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। কিন্তু মাদক ও নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

পুলিশ সূত্র জানায়, স্বাধীন গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে অস্ত্র ও অর্থ যোগান দেওয়া ছাড়াও সরাসরি হামলার সাথে জড়িত ছিলেন। রংপুরের তাজহাট ও কোতয়ালী থানায় ৫ আগস্ট দায়ের হওয়া হত্যা ও হত্যাচেষ্টার তিনটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও তিনি। একই বছরের আগস্টে যৌথ বাহিনীর হাতে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন স্বাধীন। সদর কোতয়ালী থানায় তার নামে মাদক সেবন ও ব্যবসার মামলা রয়েছে।

সদর কোতয়ালী থানার ওসি গণমাধ্যমকে জানান, স্বাধীনকে ইয়াবা কেনাবেচার সময় হাতেনাতে আটক করে যৌথ বাহিনী থানায় হস্তান্তর করে।

এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে এনসিপির নেতৃত্বে নেওয়ায় তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে অনলাইনে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—“জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণকারী দল এনসিপি যদি সেই আন্দোলনের হামলাকারী ও বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতাকে দলে নেয়, তবে আন্দোলনের মূল স্পিরিট কোথায় থাকবে?”

এ বিষয়ে সদর উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী তওহিদ হোসেন সাদ্দাম দাবি করেছেন, স্বাধীনকে ২০২০ সালেই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো রাজনৈতিক চক্রান্তের ফল।

অন্যদিকে, এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) ও রংপুর জেলা প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল্লাহ আল গালিব (Asadullah Al Galib) সাংবাদিকদের বলেন, “স্বাধীন জুলাই আন্দোলনবিরোধী ছিলেন—এমন কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। তবে ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে যদি কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ আসে, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের বিষয়টি তার জানা নেই এবং তা যাচাই করা হচ্ছে।

এদিকে, কৃষ্ণ রঞ্জন বর্মন স্বাধীনকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *