জুলাই আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এসেছিল সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) -র দফতর থেকে—এমনই বিস্ফোরক জবানবন্দি দিয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন (Chowdhury Abdullah Al Mamun)। এক সময় নিজেই মামলার আসামি থাকা মামুন এখন হয়েছেন রাজসাক্ষী। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-০১-এ সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এসব তথ্য প্রকাশ করেন তিনি।
বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে জবানবন্দি শুরু করেন সাবেক আইজিপি মামুন, যিনি জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। আদালতের বিচারিক প্যানেল নেতৃত্ব দেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার।
মামুন জানান, আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো, ব্লক রেইড এবং লেথাল উইপেন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে গৃহীত হয়। এসবের নির্দেশনা সরাসরি এসেছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেই। আর মাঠ পর্যায়ে এসব কার্যক্রমে ছিলেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব এবং গোয়েন্দা শাখার হারুন—যারা ছিলেন মারণাস্ত্র ব্যবহারে অত্যন্ত আগ্রহী।
সাবেক এই আইজিপি আরও বলেন, র্যাব-১ এর অধীনে ‘টিআইএফ’ নামে একটি গোপন বন্দিশালা পরিচালিত হতো। এছাড়াও বিভিন্ন র্যাব ইউনিটের অধীনে ছিল এমন একাধিক বন্দিশালা, যেখানে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী বা সরকারবিরোধী সন্দেহভাজনদের ধরে আনা হতো। এসব নির্দেশনাও আসত সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে।
তিনি আরও দাবি করেন, অনেক সময় এসব নির্দেশনা আসত প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী (Tarique Siddique)-র কাছ থেকেও। আয়নাঘরে আটকে রাখা ও ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করতেন র্যাবের এডিসি অপারেশন এবং গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক।
এর আগেই, চলতি বছরের ২৪ মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মামুন। তিনি আদালতে জানান, তিনি সত্য উন্মোচনের জন্য রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্য, চিকিৎসকসহ ইতোমধ্যে ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, যার মধ্যে আছেন বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal)-কেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রসিকিউশন আশা করছে, চলতি মাসের মধ্যেই এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে।