জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিধায় রাজনৈতিক দলগুলো, ঐক্যমতের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিএনপি (BNP) বলছে, সাংবিধানিক সংস্কারের প্রক্রিয়া নির্ধারণে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া যেতে পারে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) মনে করছে, সংবিধান আদেশ ২০২৫ জারি করলে ভবিষ্যতে আইনি চ্যালেঞ্জ এড়ানো সম্ভব হবে। একইসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP) গণপরিষদের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার পক্ষে মত দিয়েছে। আর সব দলকে এক ছাতার নিচে আনার জোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)।

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রস্তুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘ বৈঠক করেছে। নোট অব ডিসেন্টসহ ৮৪টি বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছালেও বাস্তবায়নের ধাপ নিয়ে তৈরি হয় মতবিরোধ। এ অবস্থায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক নতুন মোড় নেয়।

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাদের দল সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। তবে সাংবিধানিক সংস্কারের পথ কীভাবে সুদৃঢ় করা যায়, সেই প্রক্রিয়া নির্ধারণে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। তার ভাষায়, “আমরা চাই, এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয় যার মাধ্যমে আইনের সীমা অতিক্রম করা হয়। সনদ যেন প্রশ্নাতীতভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাই সুপ্রিম কোর্টের মতামত জরুরি। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অবশ্যই অনুষ্ঠিত হতে হবে, এ কথাও আমরা জানিয়েছি।”

অন্যদিকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, “আমরা চাই এমন এক আইনি ভিত্তি, যা ভবিষ্যতে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। সংবিধান আদেশ ২০২৫ জারি করা হলে তা আইনের চোখে অচ্যালেঞ্জযোগ্য হবে।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, “৮৪টি বিষয়ের মধ্যে ৪৩টি সরাসরি সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই গণপরিষদের মাধ্যমেই এ বিষয়গুলোর সমাধান সম্ভব। আলোচনার এই শেষ প্রান্তে এসে আমরা আশাহত হতে চাই না।”

সব মতপার্থক্যের মাঝেও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেন, সংস্কারের উদ্দেশ্য একটাই—স্বৈরাচার ফেরার সব পথ বন্ধ করা। তার মন্তব্য, “এই ঐকমত্য কমিশন বিশ্বে নজির হয়ে থাকবে। যদি সবাই একমত হতে পারি, আগামী নির্বাচন হবে মহোৎসবের মতো, এক নবজন্মের সূচনা। দ্বিমতের সুযোগ নেই, সকলকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।”

তিনি আরও আশ্বস্ত করেন, ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *