বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে একটি অদ্ভুত মিল—আওয়ামী লীগ (Awami League) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি (Bangladesh Jamaat-e-Islami) —দুই দলের রাজনৈতিক ধারা, কৌশল ও আচরণে ক্রমেই যেন এক ধরনের অভিন্নতা ধরা পড়ছে। ক্ষমতায় থেকেও “আন্দোলন ” করার কৌশল, জনমনে ভয় ছড়িয়ে নিজেদের বিরোধীদের দমন, এবং জনপ্রিয়তার মোড়কে দমনমূলক রাজনীতির ব্যূহ—সবই যেন একই মডেলের অনুকরণ।
সম্প্রতি, এই ভাবধারারই একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন রেজানুল করিম রনি (Rezanul Karim Rony), যিনি জবান পত্রিকার সম্পাদক। তার ফেসবুক পোস্টে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন কীভাবে ক্ষমতার ভিতরে থেকেও আন্দোলনের ছদ্মাবরণে একটি দল পতনের পথে ধাবিত হয়, ঠিক যেমনটা অতীতে আওয়ামী লীগ করেছে—এবং এখন জামায়াত করছে। পোস্টটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো:
“ক্ষমতায় থেকে আন্দোলন করা মানে আপনার পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না। শত চেষ্টা করলেও কেউ ঠেকাতে পারবে না- অভিজ্ঞতা তাই বলে। লীগ আমলেও আমরা দেখছি এই রকম চালাকি হইতো। প্রকৃত গণতান্ত্রিক দাবী-দাওয়া থেকে মনযোগ সরাইতে লীগ প্রবল বেগে আন্দোলন শুরু করে দিতো। সরকারে সে নিজেই ছিল কিন্তু মাঠে আবার আন্দোলনও করেছে। এখনও একই মডেল দেখছি। যদিও এই দলটি একাই সরকারে না, তবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। সরকারের বেশির ভাগ বা সবচেয়ে জরুরী ও প্রভাবশালী অংশ এই দলটির দখলে। কিন্তু তার পরেও তাকে আন্দোলনে যেতে হচ্ছে। ঠিক লীগের যেভাবে যেতে হতো।
অন্যদিকে মানুষ আপনাকে ভয় পায় ! আপনি আপনার বিরোধী ও সমালোচনাকারীদের বিভিন্ন ভাবে ট্যাগ দিয়ে এমন জায়গায় নিতে পারেন যে আপনার প্রশংসা করার আগ পর্যন্ত কেউ প্রকৃত ও নিরপেক্ষ থাকতে পারছে না। আপনার কপালে চরম খারাপি আছে। আপনার পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না। যখন অবস্থা এমন হয় যে, আপনি একটা রাজনৈতিক দল আর মানুষ আপনাকে ভয় পান- আপনার পতন সময়ের ব্যপার মাত্র।
এই সরকারকে বাদ দিয়ে অন্য সরকারের বা নির্বাচনকালীন একটা সরকারের দাবী মোদি ও তার জিএফ হাসিনা অনেক দিন থেকেই জানান দিয়ে আসছে। আপনারা বিরাট প্রজ্ঞাবান ও মেধাবীদের দল হয়ে সেই রাজনীতি বাস্তবায়নের দিকে হাটছেন প্রবল গতীতে। ধীরে ধীরে আপনাদের লীগময় চরিত্র প্রকট ভাবে প্রকাশ হতে শুরু করেছে প্রতিটি স্তরে।
একমাত্র চরম বোকা লোকই নিজেকে চালাক মনে করেন। জনগনকে বোকা মনে করার পরিণতি কখনও ভালো হয় নাই। আপনার ফতেল্লাহ গুলেন মডেল, দেশি- বিদেশী পরিকল্পনা। বিপুল ফান্টড, ডিপ-স্টেট। সেবার নামে ভোট কেনার আয়োজন। যতটা সম্ভব প্রশাসনকে ব্যবহার, ইসলামকে ক্ষমতার টুলস হিসেবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা, আন লাইনে- অফ লাইনে বিপুল হাইপ তৈরি করা। অন্যরা কত খারাপ আর আপনি কত ভালো- এই লাইনে সমাজকে ভাগ করে ফেলা- সব কিছু পরাজিত হবে।
মনে রাখবেন, আগামীতে আপনি সারভাইব করবেন কি না তা ঠিক করবে আপনি যাকে ধ্বংস করার সর্বমূখিন আয়োজন করছেন তার উপর। কারণ আপনি প্রবল ভাবে আত্মবিনাশী রাজনীতি শুরু করেছেন। আপনাকে বাংলাদেশে প্রচন্ড দরকার ছিল। আপনার ক্ষুদ্র স্বার্থ থেকে- এই খেলা আপনারা শুরু করেছেন কিন্তু শেষ করবে বাংলাদেশের জনগন।”
রনি’র এই লেখায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, জামায়াত যে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করছে, তা এক সময় ছিল আওয়ামী লীগেরও পরিচিত ধারা। আর এই পুনরাবৃত্তির ভেতর দিয়েই হয়তো সময় জানান দিচ্ছে—দল বদলায়, কিন্তু রাজনীতির চরিত্র বদলায় না।