মাগুরা জেলা জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami)-র আমির এ বি এম বাকের হোসেন (ABM Bakar Hossain) সম্প্রতি দলীয় প্যাডে প্রত্যয়নপত্র দান করে দুইজনকে নিজেদের কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন; যারা স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পদধারী হিসেবে পরিচিত। ওই দুইজন—পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাবুদ্দীন আহমেদ ও সোহেল রানা—জুলাই আন্দোলনে নিহত ছাত্র শহীদ আহাদ ও সুমন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। প্রয়োগ করা প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে তারা জামিন পেয়েছেন, যা প্রকাশ্যে আসলে মাগুরা জেলার মানুষ ও ছাত্রসমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দা সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ক্লেশ-হিংসার মধ্যে মহম্মদপুরে আহাদ ও সুমন নামে দুই ছাত্র শহীদ হন। তাদের পরিবারের করা হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে আছেন সাহাবুদ্দীন ও সোহেল। সে বাস্তবতা সত্ত্বেও জেলা জামায়াতে ইসলামী আমির বাকের হোসেন ওই দুইজনকে নিজের সংগঠনের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন—প্রত্যয়নপত্রে তিনি লিখেছেন, “আসামিরা আমাদের সাংগঠনিক পরিবারের একজন সদস্য। আমার জানা মতে, তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি ইসলামী শরীয়ত পালন করে চলেন এবং তাদের পরিবার ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা গড়তে অঙ্গীকারাবদ্ধ।”
প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে হত্যা মামলার ওই দুই আসামি জামিন পেলে বিষয়টি সাধারণ জনগণ ও ছাত্রসমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে—বিশেষত ফেসবুকে—এই ঘটনার সমালোচনা ও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। মাগুরার ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে—দৈনিক যুগান্তর অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছাত্রনেতা তাওফিক কালাম অভি, মেহেদী হাসান মামুন, আতিকুল ইসলাম ও জেলা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মো. জুবায়ের হোসে দাবি করেন, ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার ওপর যে বর্বর গণহত্যা চালানো হয়েছিল, সেখানে মহম্মদপুরের আহাদ ও সুমন শহীদ হয়েছেন; তাদের হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামিদের সঙ্গে কোনোভাবে আপস বা সমঝোতা থাকবে না এবং কিভাবে জামায়াতে ইসলামী বৈধতা দিয়ে তাদের নিজেদের কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তা তারা জানেন না। তারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার কড়া নিন্দা জানিয়ে ভবিষ্যতে কঠোর অবস্থান নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
শহীদ আহাদ-সুমনের আত্মীয়দের প্রতিক্রিয়াও কড়া। শহীদ আহাদের চাচা ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. ইয়াকুব আলী বলেন, “আমার ভাতিজা ছাত্রজনতার আন্দোলনে শহীদ হয়েছে। শহীদদের সঙ্গে এমন বৃহৎ বেইমানি জেলা জামায়াতের আমির করে ফেলতে পারেন—এটা আমার জানা নেই। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।” মহম্মদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক অধ্যক্ষ মৈমুর আলী মৃধা ঘটনাটিকে “অত্যান্ত দুঃখজনক” বলে অভিহিত করে জানান, জেলা জামায়াতের আমির বাকের হোসেন ফ্যাসিস্টদের এবং আহাদ–সুমন হত্যা মামলার আসামিদের জামিনে সহযোগিতা করে দলীয় প্যাডে নিজেদের কর্মী দাবি করে প্রত্যয়ন দিয়েছেন—এমন কৃত্য অনভিপ্রেত এবং নিন্দনীয়।
প্রতিবাদ ও ক্ষোভ বাড়তে থাকলে, বিষয়টি নিয়েও জেলা জামায়াতের আমির এ বি এম বাকের হোসেন প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “আমার কাছে অনেকেই প্রত্যয়ন নিতে আসে। আমার কাছে তথ্য গোপন করে প্রত্যয়নপত্রটি নিয়েছে। আমি জানতাম না ওরা আহাদ–সুমন হত্যার আসামি।” তবে তার এই বক্তব্যেও স্থানীয় জনগণের মধ্যে শান্তি ফেরেনি এবং মামলার পরিবারের সহিত সাধারণ মানুষের ক্ষোভ মুছছে না।

ঘটনাটি জেলা রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন করে উত্তেজনা যোগ করেছে—আহাদ ও সুমনের হত্যার প্রতিকার ও বিচারবিভাগীয় প্রশ্নগুলো আবারো আলোচনায় এসেছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী ও সাধারণ মানুষের আস্থা, নৈতিক দায়বদ্ধতা ও সংগঠনের স্বচ্ছতা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠেছে। মামলার তদন্ত, দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ভবিষ্যতে এমন ধরনের বিতর্ক সৃষ্টির প্রতিরোধ—এসবই এখন মাগুরার রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।