জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী পাঁচ মাসে রাজনীতিতে এমন অনেক ঘটনা ঘটবে, যা এখন কল্পনাও করা সম্ভব নয়—এমন মন্তব্য করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না (Mahmudur Rahman Manna)। তিনি মনে করেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা কেটে যাবে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেই।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (Bangladesh Film Development Corporation-BFDC)-এ অনুষ্ঠিত ‘ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কতটা পড়বে’—এই ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না। ছায়া সংসদটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি (Debate for Democracy), যার সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ (Hasan Ahmed Chowdhury Kiron)।
পিআর পদ্ধতি নিয়ে সংশয়
বক্তব্যে মান্না বলেন, বর্তমানে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচন বাস্তবসম্মত নয়। তার মতে, এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি (Jatiya Party) নৌকার বদলে লাঙ্গলে চড়ে ক্ষমতায় আসতে পারে, এবং এতে পতিত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পুনরাবির্ভাবের সুযোগ তৈরি হবে। তিনি দাবি করেন, “এখনকার জাপা আর আওয়ামী লীগের লেজ নয়, বরং মাথা হয়ে উঠেছে।”
ছাত্রসংসদের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে সীমিত
ছাত্রসংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে মান্না বলেন, “ছাত্র রাজনীতির ফলাফল জাতীয় নির্বাচনে কিছুটা প্রতিফলিত হলেও, তা নির্বাচনের ফল আমূল বদলে দেবে না।”
তবে, জুলাই মাসে প্রকাশিত ‘ঐকমত্য সনদ’ সম্পর্কে আশাবাদ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এতে ইতিবাচক একটি দিক রয়েছে এবং তিনি আশা করেন এটি বাস্তবায়ন হবে। একই সঙ্গে নাগরিক ঐক্য এবং গণ অধিকার পরিষদের ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান।
জাতিসংঘ অধিবেশনে অনিবন্ধিত দলের সদস্যকে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী করার ঘটনাকেও মান্না সমর্থনযোগ্য মনে করেননি।
প্রসঙ্গত: পিআর ইস্যুতে উত্তাল রাজনীতি
সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) কর্তৃক নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগ (Awami League) ও ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ। এই অভিযোগের পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন মিছিল করে নিজেদের সক্রিয়তা প্রমাণ করছে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) ছাত্রশিবির রাস্তার আন্দোলনের ওপর জোর দিচ্ছে পিআর পদ্ধতির দাবিতে, যদিও তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নামছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে ভারত চাইছে আওয়ামী লীগকে গ্রহণযোগ্য পরিসরে আবার রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে, আর সে ক্ষেত্রে পিআর পদ্ধতি তাদের হাতে থাকা একমাত্র কার্যকর অপশন। এই প্রেক্ষাপটে জামায়াতের পিআর আন্দোলন অনেকের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছে—এই দাবিটি কি আদৌ জামায়াতের, না কি অন্য কারও ইন্ধনে তারা এ ইস্যুতে নামছে?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolon Bangladesh)-এর সঙ্গে জোট করার লোভই কি জামায়াতকে বিদেশি কোনো শক্তির চাপে ভিন্নপথে হাঁটতে বাধ্য করছে? রাজনৈতিক সচেতন মহলে এমন প্রশ্ন এখন ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।