গুলি চালিয়ে কিছু লোক মেরে ফেললে বিক্ষোভ এমনিতেই দমন হয়ে যাবে: তারেক সিদ্দিকী

জুলাই আন্দোলনের সময়কার ভয়াবহ সহিংসতার নতুন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের ৪ আগস্ট রাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী (Tareq Siddiqi) তাকে বিশেষ পরামর্শ দেন—গুলিবর্ষণ করে কয়েকজনকে হত্যা করা হলে বিক্ষোভ আপনা-আপনি দমন হয়ে যাবে। তার পরদিনই ৫ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশে শত শত আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। এসব তথ্য উঠে এসেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়, যেখানে একমাত্র আসামি হিসেবে রয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু (Hasanul Haq Inu)। প্রসিকিউশন গত বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-২-এ ৩৯ পৃষ্ঠার এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। সেখানে ২০ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। আদালত ইনুকে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়েছে। শুধু আন্দোলন দমনের হত্যাযজ্ঞ নয়, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, বিরোধীদল দমনে বিচারপতিদের পুরস্কৃত করা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দিয়ে বিচারকদের সুবিধা দেওয়া, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা, বিচারপতি খায়রুল হকের প্রতারণাসহ নানা ঘটনার কথাও ফরমাল চার্জে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, জুলাই আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও ১৪ দলীয় জোটের নেতারা একত্রে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের সিদ্ধান্ত নেন। এরই অংশ হিসেবে ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ আন্দোলন দমনে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে।

ফরমাল চার্জে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’, ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতি-নাতনি’ আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। তিনি আন্দোলন দমনে ড্রোন, হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এমনকি তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা আগেই পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *