ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের (Dr. Syed Abdullah Mohammad Taher), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, ভারতের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করে দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তেজপাতা ছড়িয়ে দিয়েছেন—এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নিউইয়র্কে দেওয়া সেই সংবর্ধনামূলক ভাষণের সুরকে ‘জিহাদী জোশ’ বলে কড়া সমালোচনা করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান (Dr. Jahed Ur Rahman)।
নিউইয়র্কে এক সভায় ডা. তাহের ভারতের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ধর্মযুদ্ধের কথাই উত্থাপন করেছেন—এমন দাবি করেন ডা. জাহেদ। প্রশ্ন রেখেছেন, হঠাৎ কেন এই তীব্র রুরু? বক্তৃতায় ডা. তাহের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারের কথাই বলেছেন; একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কারো সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না।” তবে তাঁর আশার কথাটা ছিল বিস্ময়কর—তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, যদি ভারত আক্রমণ করে তবে জামায়াতকে ১৯৭১ সালে “মিথ্যাভাবে চাপানো” বদনাম ঝেড়ে ফেলার সুযোগ মিলবে এবং তারা নিজেদের ‘প্রকৃত স্বাধীনতা যোদ্ধা’ হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে।
ডা. তাহের দাবি করেন, ভারত যদি আক্রমণ করে, কমপক্ষে ৫০ লাখ যুবক দেশের পক্ষে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করবে—তাদের মধ্যে একটি অংশ গেরিলায় অংশগ্রহণ করবে এবং বাকিরা বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। তিনি এটি ‘গাজাওয়াতুল হিন্দ’ সম্পর্কিত হাদিসের বাস্তবায়নের পরিকল্পনার সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং মনে করান যে, অন্যান্য দলগুলো পর্যাপ্ত সংগঠিত নয়; তাই জামায়াতই হবে ‘সংগঠিত শক্তি’ ও ‘খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা’।
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডা. জাহেদ সেই উস্কানিমূলক সুরকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গত পনেরো বছর জামায়াতে ইসলামীর যেসব নেতারা ‘গর্তে লুকিয়ে’ ছিলেন, যারা আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আতাত করেছেন—তারা কিভাবে আজ এত বড় ‘জিহাদি’ কথা বলছেন? ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের গণহত্যাকে সমর্থন করা এবং জামায়াতের ভূমিকা সম্পর্কে ডা. জাহেদ পুনরায় বলেন, সেটি ছিল মারাত্মক অপরাধ—কোনো ধরনের ক্ষমার বিষয় হতে পারে না।
ডা. জাহেদ আরও বলেন, ডা. তাহেরের হঠাৎ করে জিহাদি সুর ধারণ করার পেছনে একটি প্রধান কারণ হতে পারে তাঁর পূর্ববর্তী ‘ভারত-ঘনিষ্ঠ’ মন্তব্য। সম্প্রতি বিবিসি বাংলা (BBC Bangla) প্রকাশিত রিপোর্টে ভারতীয় গবেষক শ্রীরাধা দত্তের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ডা. তাহের জোর দিয়ে জানিয়েছিলেন—জামায়াত অস্ত্র চোরাচালানে জড়িত নয় এবং তারা শরিয়া আইন নেবে না—এমন আশ্বাস দিয়ে ভারতীয় দিককে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। সে মন্তব্যের ফলে দেশে ‘ভারতের দালাল’ তকমা লাগার সম্ভাব্য রাজনীতিক ব্যয় কাটাতে এখন তিনি আবার বিরাট কণ্ঠে বিরোধী সুর ধরছেন—এমনটাই মনে করেন ডা. জাহেদ।
বিশ্লেষক বলেন, যখন জামায়াতের মতো উচ্চপর্যায়ের নেতারা ‘গাজাওয়াতুল হিন্দ’-এর আহ্বান করেন, তখন তা আসলে ভারতের হকারিতামূলক রাজনীতিকদের—বিশেষ করে বিজেপি (BJP)—ই তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুবিধা নেওয়ার জন্য কাজে লাগতে পারে। বিজেপি এই ধরনের বক্তব্য ব্যবহার করে বাংলাদেশে ধর্মযুদ্ধের হুমকিকে তুলে ধরতে পারে, যদি তা উস্কানি দেয়।
ডা. জাহেদ বলেছেন, গত ১৫ বছরে জামায়াতের একাংশ ‘গর্তে’ ছিল; ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমাবেশে যোগ দিয়েও বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ-ঘটিত প্রান্তে নিজের লোক রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তাছাড়া তিনি ওই সময়টিতে বিএনপির ধারাবাহিক সামনের লড়াইকে তুলনা করে উল্লেখ করেন যে, বিএনপি সীমাহীন চ্যালেঞ্জের মুখে বহু মূল্য দিয়েছে—অন্যদিকে জামায়াত লুকিয়ে থেকে এখন বড়ো কথাই বলছে।
ডা. জাহেদ তীব্রভাবে প্রতিপাদন করেন, যদি জামায়াত শর্তসাপেক্ষে বলছে তারা শরিয়া আইন আনবে না, তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তারা কোন ইসলামিক রাজনীতি করছেন এবং ‘ইসলাম’ শব্দটি দলের নামেই থাকা যুক্তিযুক্ত কী না। নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেই এসব বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন—যদি ক্ষমতায় গেলে তারা ইসলামকে কিভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, নতুবা ইসলাম রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করে কি ভণ্ডামি ছড়ানো হচ্ছে, তা দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় আসা উচিত।
এই শোরগোল চলার মধ্যেই রাজনৈতিক মহলে ডা. তাহেরের বক্তব্য ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।