নির্বাচনের আগে বামপন্থি দলগুলোর এক ছাতার উদ্যোগ, ঢাকায় বড় সমাবেশের প্রস্তুতি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার প্রস্তুতিতে নেমেছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও বাইরে থাকা বেশ কিছু বাম ও প্রগতিশীল দলকে আলোচনায় টানার চেষ্টা চলছে। মূল লক্ষ্য—রাজপথের আন্দোলন থেকে শুরু করে নির্বাচনী লড়াই—সবখানেই প্রভাব বিস্তার করা।

সম্প্রতি বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চ একাধিক বৈঠক করেছে। সেখানে গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ, সাম্যবাদী দল, ঐক্য ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানীসহ আরও কয়েকটি বাম দলকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকগুলোতে জাতীয় ঐকমত্যের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশগ্রহণের রূপরেখা নিয়ে মতবিনিময় করা হয়েছে।

আগামী ১৪ নভেম্বর ঢাকায় বড় পরিসরে সমাবেশ করবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি (Communist Party of Bangladesh – CPB)। এই সমাবেশে বাম ও প্রগতিশীল ধারা থেকে আসা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং চিন্তাশীল ব্যক্তিদের একত্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পুরো রাজনৈতিক সমঝোতার চিত্র স্পষ্ট হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর।

২০১৮ সালের ১৮ জুলাই আটটি বামপন্থি দল মিলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের যাত্রা শুরু হয়। এর মধ্যে ছিল সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (Bangladesh Socialist Party-BASAD), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং গণসংহতি আন্দোলন। তবে ২০২২ সালের মে মাসে মতবিরোধ দেখা দিলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। পরে ৮ আগস্ট তারা জোট থেকে বেরিয়ে এসে আরও পাঁচটি প্রগতিশীল দলের সঙ্গে মিলে নতুন প্ল্যাটফর্ম—গণতন্ত্র মঞ্চ—ঘোষণা করে।

গণতন্ত্র মঞ্চের প্রথম সারির দলে ছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। পরবর্তীতে ভাসানী অনুসারী পরিষদ রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হয়ে ভাসানী জনশক্তি পার্টি নাম নেয়। অন্যদিকে, গণঅধিকার পরিষদ একক পথে চলার সিদ্ধান্ত নেয়।

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বাম গণতান্ত্রিক জোট উভয়ই নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে। গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত ছয়টি দল শনিবারের মধ্যে দলীয় প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা সম্পন্ন করবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জোটের শরিক ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, “আমরা প্রথম ধাপে প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছি। এরপর করণীয় নির্ধারণ করব। অনেকে ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে আসতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।”

গণতন্ত্র মঞ্চ এরই মধ্যে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে মাঠে ছিল। আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে কিছু আসনে সমঝোতা করে ভোট করার পরিকল্পনা থাকলেও নিজেদের জোটগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতিও তারা নিচ্ছে। অন্যদিকে, বাম গণতান্ত্রিক জোট বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় না গিয়েই নির্বাচনে লড়বে। তবে প্রয়োজনে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না তারা।

এদিকে, বাম গণতান্ত্রিক জোটও তাদের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ জাসদ, ঐক্য ন্যাপ, ন্যাপসহ কয়েকটি প্রগতিশীল দলের সঙ্গে ইতোমধ্যে প্রাথমিক আলোচনার খবর পাওয়া গেছে। দুর্গাপূজার ছুটি শেষে এ আলোচনার গতি আরও বাড়বে বলে জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, “আমরা সমমনা অনেকের সঙ্গে কথা বলছি। একই সঙ্গে নিজেদের মতো নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। দক্ষিণপন্থিদের মোকাবিলায় বাম প্রগতিশীলদের এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা চলছে।”

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজও জানান, “আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে এখনো আসন বণ্টন বা সমঝোতা নিয়ে কারও সঙ্গে আলাপ হয়নি। পূজার পর আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *