মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম (Syed Muhammad Faizul Karim) বলেছেন, ভাষার কারণে এ দেশ ভাগ হয়নি, বরং দেশ ভাগ হয়েছিল মুসলমানদের জন্য। তাঁর দাবি, ১৯৪৭ সালে মুসলমানদের জন্য এই ভূখণ্ড স্বাধীন হয়েছিল, আর ১৯৭১ সালে কেবল পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছে বাংলাদেশ। “৪৭ সালে দেশ স্বাধীন না হলে কেয়ামত পর্যন্ত আন্দোলন করেও লাল-সবুজের পতাকা পাওয়া সম্ভব হতো না,”—শনিবার ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত “স্বাধীনতার পথরেখা – ৪৭, ৭১, ২৪ প্রেক্ষিত আগামীর বাংলাদেশ” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করীম আরও বলেন, স্বাধীনতা রক্ষার মূল শর্ত হলো আদর্শ ধরে রাখা। তাঁর ভাষায়, “যতক্ষণ আপনি আপনার আদর্শ লালন করবেন ততক্ষণ কেউ আপনাকে শোষণ করতে পারবে না। কিন্তু যখনই আদর্শ ছেড়ে দেবেন তখনই রাশিয়া, আমেরিকা, চীন ও ভারত তাদের মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।” তিনি ঘোষণা দেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ আর কোনো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির গোলামী করবে না।
ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে—এটাই হচ্ছে স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো প্রত্যেকের ধর্ম পালনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।” তাঁর অভিযোগ, ১৯৭১-পরবর্তী সময়ে যে-ই এ দেশ শাসন করেছে, কেউই ইসলামকে বাস্তবায়নের চিন্তা করেনি। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ২০২৪-এর পর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দেশে ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করবে।
ফয়জুল করীম সমালোচনা করে বলেন, আজ যারা ক্ষমতায় যেতে চায় তারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলছে। “মুসলমানদের চেতনাকে ধ্বংস করা গেলে এই দেশে মুসলমানদের স্বাধীনতা থাকবে না।”
গোলটেবিল বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান (Gazi Ataur Rahman) বক্তব্য দেন। তিনি অভিযোগ করেন, ভারত ১৯৭১-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২৩ বছর নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাঁর মতে, ১৯৪৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দেশের শাসকদের মনস্তাত্ত্বিক ধারা ছিল উপনিবেশিক। “এই উপনিবেশিক চিন্তার জন্যই প্রকৃত স্বাধীনতা আজও পাওয়া যায়নি,”—বলেন তিনি।
গাজী আতাউর রহমান আরও দাবি করেন, গত ১৫ বছর ধরে ভারত আওয়ামী লীগের মাধ্যমে বাংলাদেশ শাসন করেছে। আর এখন ভারত নতুন গোষ্ঠীর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তাঁর মতে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একই ধারার রাজনীতি করছে। তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা ইসলামপন্থীদের যেভাবে আঘাত করতেন, বিএনপিও আজ সেই একই ভাষায় ইসলামি শক্তিকে ভয় দেখাচ্ছে। এমনকি শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭২ সালের সংবিধানেই প্রথম আঘাত করেছিলেন ইসলামি চেতনায়। তাই ২০২৪-এর চেতনা হত্যার অভিযোগও তোলেন তিনি।
এ বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান মুজাহিদ। এতে বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম যুব সংগঠনের নেতারাও বক্তব্য রাখেন।