ভারতের এক দুর্গাপূজা মণ্ডপে বিএনপি-নেতা ও নোবেলজয়ী ব্যাক্তিত্বের মুখাবয়ব ব্যবহার করে তাঁকে ‘অসুর’ হিসেবে উপস্থাপনের ঘটনাকে অত্যন্ত নীচ ও অসম্ভব অপসংস্কৃতির পরিচয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi)। তিনি বলেন, এমন ঘটনাক্রম কড়া প্রতিক্রিয়ার যোগ্য এবং এটি সামাজিক বোধকে আঘাত করেছে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে তিনি রাজধানীর জিয়া উদ্যান (Zia Udyan)-এ অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-এ নির্বাচিত নবকমান্ড সদস্যদের সঙ্গে মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, ভারতের ওই মণ্ডপে ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-কে ‘অসুর’ হিসেবে দেখানো একেবারেই নীচতম মানসিকতার প্রকাশ এবং এ ধরনের কড়া কায়দা সংস্কৃতিহীনতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
রিজভী আরও বলেন, আজকের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করার জন্য নানা রকম চক্রান্ত চলছে। করেই চলছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ—দেশপ্রেমিকেরা—এরকম অপচেষ্টা কোথা থেকে আসে তা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। তাই এবারের দুর্গাপূজা উদযাপনের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগণ উৎসব সম্পন্ন করেছেন, খুব উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়েছে; এতে প্রতিকূল সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে।
দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ সামনে তুলে ধরে রিজভী বলেন, আমাদের দেশে হিন্দু-মুসলিম—সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে কাজ করে। আলেম-ওলামা, মসজিদের মুয়াজ্জিন, মসজিদের ইমাম এবং মাদরাসার ছাত্ররা পর্যন্ত পূজামণ্ডপ পাহারা দিয়েছে। তিনি এটাকে বললেন আমাদের ঐতিহ্য; সম্প্রীতির ঐতিহ্য। আমাদের নেতা স্পষ্টভাবে বলেছেন—we are bound by long-standing bonds of harmony—এবং তাই তাঁদের কেউ বিভাজন সৃষ্টি করতে পারবে না। বিদেশে যে কেউ যা-ই করুক, অন্ধকার যতই বাড়িয়ে আনুক, বাংলাদেশি জনগণকে বিভক্ত করা তাদের সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে সম্ভব হবে না, জানান রিজভী।
ব্যাপক রাজনৈতিক প্রসঙ্গে রিজভী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, জনগণ চাইছেন স্বাধীন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। যে সময় আর সুযোগ রয়েছে, সে সময়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করাটা মোটেই কঠিন নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে এবং জনগণ ভোট দিতে প্রস্তুত। যারা নতুন ইস্যু তৈরি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তাদের কৌশলও জনগণের সামনে উন্মোচিত হবে—এমন মন্তব্য করেন তিনি।
নিরপেক্ষতা ও প্রশাসনিক নিয়োগ বিষয়ে রিজভী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ হবে—কোনো একপেশে হেলবে না” —এটাই প্রত্যাশা। কিন্তু প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ইসলামপন্থি একটি রাজনৈতিক দলের লোকজনকে কৌশলে বসানো হচ্ছে; এমন মনোভাবাপন্ন প্রশাসক ও আমলাদের নিয়োগ সংক্রান্ত দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন যে—এভাবে কোনো অবস্থাতেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে বলেন—নির্বাচন পরিচালনায় এমন ব্যক্তিদের নিয়োজিত করা উচিত যারা সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন এবং কোনো দলের আজ্ঞাবাহক হবেন না।
অান্তে রিজভীর এই বক্তব্যে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিবেশ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতি এবং আগামী নির্বাচনের ন্যায্যতা—এসব বিষয়ের গুরুত্ব পুনরায়浮 হয়ে উঠে; পাশাপাশি তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও ডেমোক্র্যাটিক প্রক্রিয়ার রক্ষার আহ্বানও করেছেন। উল্লেখ্য, ঘটনাস্থলীয় অভিযুক্ত ঘটনার কট্টর নিন্দা ব্যক্ত করলেও রিজভী বিষয়টিকে দেশীয় একটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার চেষ্টার অংশ হিসেবে দেখছেন না; বরং তিনি এটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চালিত একটি চরম নিম্নশিক্ষার প্রতিফলন বলেছেন, যা দেশের মানুষের ঐক্যকে পরীক্ষায় ফেলতে চায়।