জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং ১১ নভেম্বর ঢাকায় ঘোষিত মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। দলটির পাঁচ দফা দাবি এবং সেগুলোর বাস্তবায়নে দেওয়া হুঁশিয়ারি ঘিরে সাংবাদিক ও বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা। সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল (Masud Kamal) নিজ ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, জামায়াত নেতাদের বক্তব্য এখন অনেকটাই ভারসাম্যহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হুমকিতে ভরপুর।
জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার (Mia Golam Porwar) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ১১ নভেম্বরের মধ্যে দাবি না মানলে ঢাকার চিত্র বদলে যাবে। আর দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের (Syed Abdullah Mohammad Taher) সরাসরি বলেছেন, ‘সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, আঙুল বাঁকা করব। কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। নো হাংকি পাংকি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই।’
এই বক্তব্যগুলোকে নাটকীয়, হুমকিসুলভ এবং অসাংবিধানিক দাবি আখ্যা দিয়ে মাসুদ কামাল বলেন, “আপনারা এসব নাটক করবেন না, প্লিজ।” তিনি প্রশ্ন তোলেন—“কাকে হুমকি দিচ্ছেন? সরকারকেই তো, তাই না? অথচ সরকারের সঙ্গে তো আপনাদের সম্পর্ক ভালো! একসঙ্গে আমেরিকা গেছেন, একই ফ্লাইটে ২০ ঘণ্টা ভ্রমণ করেছেন, এটা সবাই জানে। অনেকেই তো বলেন সরকার আসলে আপনারাই চালাচ্ছেন। তাহলে এই হুমকি কাদের জন্য?”
জামায়াতের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে প্রথমটিকে মাসুদ কামাল বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য আদেশ দিতে হবে’—এ দাবি অসাংবিধানিক। কারণ, উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্যের আদেশ জারির ক্ষমতা নেই। তারা কেবল রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারেন। উপদেষ্টারা আইন প্রণয়ন, অধ্যাদেশ জারি বা জাতীয় আদেশ জারির এখতিয়ার রাখেন না। এই দাবি মানা মানেই হবে সংবিধানের বাইরে যাওয়া।
দ্বিতীয় দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “আপনারা বলছেন, চলতি মাসের মধ্যেই গণভোট দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে তো গণভোটের কোনো বিধানই নেই! গণভোট হয় সংসদীয় সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে। অথচ এখানে সংসদই নেই। তাহলে কোন ভিত্তিতে গণভোট হবে?”
তিনি আরও বলেন, জামায়াত যে ৪৮টি বিষয়ে গণভোটের কথা বলছে, সেটি আসলে একটি বিভ্রান্তিকর কৌশল। এটি কোনো রেফারেন্ডাম নয়, বরং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির একধরনের প্রচেষ্টা।
দলটির বাকি দাবিগুলোর মধ্যেও রয়েছে—জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়ন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, আওয়ামী লীগ সরকারের ‘গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার’, এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করার মতো চরম রাজনৈতিক পদক্ষেপ।
এসব দাবির পেছনে যুক্তির ঘাটতি এবং অস্পষ্টতা তুলে ধরে মাসুদ কামাল বলেন, “আপনারা নিজেরাই বলছেন—বর্তমান সরকার একটি সাংবিধানিক সরকার। তাহলে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি কিভাবে মানা যায়?”
তিনি স্পষ্ট করে দেন, হুমকি-ধমকির রাজনীতি কখনোই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। “আমরা চাই, নির্বাচন হোক, জনগণ যার পক্ষে রায় দেবে সে-ই সরকার গঠন করুক। কিন্তু হুমকি দিয়ে, ‘ঢাকার চেহারা পাল্টে দেব’ বলে, ‘আঙুল বাঁকা করব’ বলে দেশ চালানো যায় না। এসব গণতান্ত্রিক রাজনীতির অংশ নয়।”
জামায়াতের রাজপথের প্রস্তুতি এবং হুমকি ধাঁচের বক্তব্যকে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও সম্ভাব্য অস্থিরতার ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা। আর মাসুদ কামালের মতে, জনগণ এসব ‘নো হাংকি পাংকি’ গ্রহণ করে না। বরং তারা একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ চায়, যেখানে গণতন্ত্র ও সংবিধান সম্মানিত হয়।


