জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের স্বচ্ছতা নিয়ে বিশ্বের সামনে ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তিনি।
এদিন দুপুরে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রায়ে আদালত বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও কামালের সম্পদ বাপেয়াপ্তের আদেশও দেন আদালত। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আদালত যেটা বলেছেন যে অপরাধী বা সাজাপ্রাপ্ত আসামী শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের যত সম্পদ বাংলাদেশে আছে, সকল সম্পদকে বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের অনুকূলে ন্যাস্ত করা হবে। সেখান থেকে রাষ্ট্র সকল শহীদ পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন। সকল আহত পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতি পূরণ প্রদান করবে। এটা হচ্ছে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে আদেশ।
রায়ের স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই রায় প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে যত বড় অপরাধী হোক তার অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে এবং তার প্রাপ্য শাস্তি পেতে হবে। এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ সকল আন্তর্জাতিক নর্মস, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে ক্রাইমস এগেইন্স্ট হিউম্যানিটির মত কমপ্লেক্স অপরাধের বিচার করতে সক্ষম এবং বাংলাদেশ সাফল্যের সাথে সেটা করেছে। আমরা এটাও একই সাথে বলতে চাই, যে কোয়ালিটি অব এভিডেন্স এখানে দেখানো হয়েছে, যে ধরনের সাক্ষ্য প্রমাণ এই আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যে কোন আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এই সাক্ষ্য প্রমাণগুলো উতরে যাবে এবং পৃথিবীর যে কোন আদালতে এই সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজকে যেসব আসামীকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই একই শাস্তি প্রাপ্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই বিচার সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়েছে। কোন কর্নার থেকে, ইভেন স্টেট ডিফেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে বা এই বিচারে কোন ইনজাস্টিস হয়েছে, কোন জায়গায় মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ কেউ কখনো করেনি, করতে পারবেও না। গোটা দুনিয়ার সামনে এই বিচার হয়েছে, আপনারা সাক্ষী ছিলেন। আমরা কখনো কখনো এগুলো লাইভ টেলিকাস্ট করেছি। পৃথিবীর সবার কাছে আমাদের ওপেন চ্যালেঞ্জ- এই বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল, নিরপেক্ষ ছিল। প্রত্যেকেই আইন অনুযায়ী কাজ করেছেন এবং এইখানে যে কোয়ালিটির এভিডেন্স দাখিল করা হয়েছে, আমরা আবারো চ্যালেঞ্জ করছি দুনিয়ার যে প্রান্তে খুশি সেখানে যান, যে কোন আদালতে এভিডেন্স গিয়ে হাজির করেন, এই অপরাধীদের একই ধরনের শাস্তি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
এই রায় অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে রেফারেন্স হিসেবে বিচারের সহযোগী হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই ক্রাইমস এগেন্স্ট হিউম্যানিটিতে টপ কমান্ডারদের দায় যেখানে প্রমাণিত হয়েছে, সেটি পরবর্তীতে নিচের টায়ারের যে সমস্ত কমান্ডাররা আছেন বা ব্যক্তিরা যারা ক্রাইমস এগেন্স্ট হিউম্যানিটির সাথে সম্পৃক্ত, তাদের অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে ডেফিনেটলি একটা জুডিশিয়াল ডিসিশন হিসেবে এই রায়টি কাজ করবে। সেটা যথা নিয়মে যতটুকু প্রয়োগযোগ্য হবে, সেভাবেই প্রয়োগ হবে। তবে প্রত্যেকটি মামলায় প্রত্যেকটি আসামির বিরুদ্ধে এভিডেন্সগুলো স্বতন্ত্রভাবেই দেওয়া হবে এবং প্রত্যেক আসামিকে তার নির্দোষিতা প্রমাণের যথোপযুক্ত সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি চাইলে তার নির্দোষিতা প্রমাণের জন্য তার ডিফেন্স উইটনেসকে আনতে পারবেন। ডিফেন্স ডকুমেন্ট প্রডিউস করতে পারবেন। এই রায় একটা নজির হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু প্রত্যেকটি আসামী বা প্রত্যেকটি মামলার বিচার স্বতন্ত্রভাবেই অনুষ্ঠিত হবে।’


