ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠা রাজধানী: মেট্রোরেলের ছয় স্টেশনে ফাটলের চিত্র

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দুপুরের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে শুধু দেশ নয়, কেঁপে উঠেছে রাজধানীর সবচেয়ে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা—মেট্রোরেলও। কম্পনের পর বিভিন্ন স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে ছয়টি স্টেশনে নানান স্থাপনায় ফাটলের দাগ। বিকেলের দিকে সরেজমিন পরিদর্শনে এই বাস্তবতা নিশ্চিত হয়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও বিজয় সরণি স্টেশনের বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন কক্ষের ফ্লোরে স্পষ্ট ফাটল দেখা যায়। বিজয় সরণির সাব-স্টেশন কক্ষের প্রবেশদ্বারের দেয়ালেও একই ধরনের ক্ষতি চোখে পড়ে। পল্লবী স্টেশনের বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন কক্ষের ফ্লোর এবং স্টেশন নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভেতরেও ফাটল ধরা পড়েছে—যা কর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মিরপুর ১১ স্টেশনের বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের ফ্লোরে, মিরপুর ১০ স্টেশনের ভেতরের কিছু টাইলসে এবং ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের যাত্রীদের ব্যবহৃত লিফট কোরের অভ্যন্তরীণ দেয়ালেও নতুন ফাটল দেখা দিয়েছে।

পল্লবী স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালের ফাটল বেশ দৃশ্যমান। সেখানে ডিউটিতে থাকা তিন কর্মীর একজন, স্টেশন কন্ট্রোলার মো. সায়েম প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও, ফাটল দেখানোর পর বলেন, ‘আগেও ফেটে থাকতে পারে, আবার ভূমিকম্পেও ফাটতে পারে। আমি জানি না। এখন আমি প্রথম দেখলাম।’ তিনি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

স্টেশনের আরেক কর্মী জানান, আরও একটি স্থানে ফাটল দেখা গেছে, তবে তিনি সুনির্দিষ্ট স্থানটি জানাতে অনিচ্ছুক ছিলেন। মিরপুর ১০ স্টেশনের আরেক কর্মীও নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেন যে কয়েক জায়গার টাইলস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিরপুর ১১, বিজয় সরণি ও ফার্মগেট স্টেশনেও কাজ করা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বললে তারাও ফাটলের তথ্য নিশ্চিত করেন।

ভূমিকম্পের পর মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তবে, বিকেল থেকেই মেট্রোরেল স্বাভাবিকভাবেই চলাচল শুরু করে। এই সময় যাত্রী সাব্বির রহমান ফাটলের খবর শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা ঠিক না। এভাবে ফাটল থাকার পরও মেট্রোরেল চালানো ঠিক হয়নি। দুর্ঘটনা ঘটতে কতক্ষণ?’

অন্য যাত্রী সুস্মিতা জানান, ‘শুনে খারাপ লাগছে। মেট্রোরেল খুব উপকারী। এত খরচ করে নির্মিত মেট্রোরেলের এমন ক্ষতি হবে—এটা চিন্তায় ছিল না। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে কিছু করারও থাকে না।’

কারওয়ান বাজারের বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন কক্ষও তালাবদ্ধ ছিল রাত ৮টার দিকে। সেখানে থাকা একজন কর্মী জানান, ভিতরে ফাটল আছে এবং অনেক কর্মীই ভয়ে আছেন।

ফাটলের বিষয়ে জানতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) (Dhaka Mass Transit Company Limited) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সংস্থার আরও এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

পরে অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে ফোনে পাওয়া গেলে তিনি বলেন, ‘ফাটল আমরা দেখেছি। এগুলো সিরিয়াস না। আমরা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি।’ মেট্রোরেল চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো ট্রায়াল রান করেছি। কোনো অসুবিধা না দেখে তবেই মেট্রো চালু করেছি।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *