রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার আন্তর্জাতিক সীমান্তঘেঁষা মাইনদারছড়া মুখ—পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম দুর্গম এই পাড়ায় সোমবার সকাল থেকেই বিশেষ অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকা নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের জন্য দিনভর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে সেনাবাহিনী, যাতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত না হন এবং মৌলিক সহায়তা পান।
সেনাবাহিনীর সূত্র জানায়, মূল সড়ক বা নৌপথ থেকে বিচ্ছিন্ন এই সীমান্তঘেঁষা পাড়াটি বহুদিন ধরেই দুর্গম অবস্থায় রয়েছে। অভিযানের পাশাপাশি মানবিক উদ্যোগ হিসেবে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার আয়োজন করা হয়। সকালেই চিকিৎসা নিতে আসেন এলাকার জুমচাষি সাগা তংচংগার স্ত্রী সিনাবি তংচংগা (৬০)। সেনাবাহিনীর চিকিৎসকেরা তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে জানান, সিনাবির কিডনি ও পেটের জটিলতা অত্যন্ত গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং দ্রুত উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
দুর্গম এলাকায় এ ধরনের জটিল রোগীর চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয় সেনাবাহিনী। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ডিভিশন সদর থেকে দ্রুত আর্মি এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়। পরে বিকেলে সিনাবিকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম সিএমএইচে নেওয়া হয়, যেখানে তাকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানান, সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানোয় তার অবস্থা এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
একজন সেনা কর্মকর্তা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা ও সেবাকে তারা সমান গুরুত্ব দেন। তার ভাষায়, অভিযান কেবল সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে নয়। তাই অভিযান চললেও মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। স্থানীয় বাসিন্দারাও জানান, দুর্গম এলাকায় জরুরি চিকিৎসাসেবার সুযোগ খুবই সীমিত—সেনাবাহিনীর এমন উদ্যোগে তারা স্বস্তি পেয়েছেন। সেনাবাহিনী আরও জানায়, পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করতে নিরাপত্তা কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক সেবার পরিধিও আরও বাড়ানো হবে।


