নির্বাচনকালীন স’\হিং’\সতা ও ভ’\য়ভী’\তি প্রদর্শন রোধ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো এবং ব্যক্তিগত সশস্ত্র বাহিনী গঠনের প্রবণতা ঠেকানোর লক্ষ্য নিয়ে ‘রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের জন্য সাময়িক আ’\গ্নে’\য়া’\স্ত্র লাইসেন্স ও সশস্ত্র রক্ষী নিয়োগসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে সরকার।
‘রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের অনুকূলে আ’\গ্নে’\য়া’\স্ত্র লাইসেন্স ও রিটেইনার নিয়োগ নীতিমালা–২০২৫’ শিরোনামে আজ সোমবার নীতিমালাটি প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry of Home Affairs)। এতে বলা হয়েছে, প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকির ভিত্তিতে সীমিত পরিসরে লাইসেন্স প্রদান, সশস্ত্র রক্ষী নিয়োগে অনুমোদন এবং পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আইনের শাসন নিশ্চিত করাই এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য।
এর আগে গত শনিবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (Jahangir Alam Chowdhury) সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আ’\গ্নে’\য়া’\স্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং যেসব লাইসেন্স আগে সরকারের কাছে জমা রয়েছে, সেগুলো চাইলে সংশ্লিষ্টরা ফেরত পাবেন।
এই নীতিমালা প্রণয়নের পটভূমিতে সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়তি আলোচনা তৈরি হয়। গত শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ও’\স’\মা’\ন হা’\দি (Sharif Osman Hadi) রাজধানীর পুরানা পল্টনে গু’\লি’\বি’\দ্ধ হন। তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। গু’\রু’\তর অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (Dhaka Medical College Hospital) এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতাল (Evercare Hospital)-এ ভর্তি করা হয় তাকে। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ সোমবার দুপুরে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে।
কারা লাইসেন্স ও রিটেইনার পাবেন
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বলতে সরকার স্বীকৃত বর্তমান বা সাবেক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বোঝাবে। আর জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী বলতে নির্বাচন কমিশনে বৈধভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল ও গৃহীত প্রার্থীকে বোঝানো হয়েছে।
রিটেইনার বলতে বোঝানো হয়েছে—রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় নিয়োজিত ও অনুমোদিত সশস্ত্র ব্যক্তিকে।
আ’\গ্নে’\য়া’\স্ত্র লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা
নীতিমালা অনুযায়ী, আবেদনকারীকে সরকার স্বীকৃত রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হতে হবে অথবা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। আবেদনকারীর প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে—এটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই করে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা এবং অস্ত্র সংরক্ষণের নিরাপদ ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক।
কোন ধরনের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে
এই নীতিমালার আওতায় কেবল আত্মরক্ষার জন্য সীমিত ক্যালিবারের (এনপিবি) আ’\গ্নে’\য়া’\স্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে। একাধিক অস্ত্রের লাইসেন্স অনুমোদন করা হবে না। অর্থাৎ, যাদের আগে থেকেই লাইসেন্স রয়েছে, তারা নতুন করে এই নীতিমালার আওতায় লাইসেন্স পাবেন না। স্বয়ংক্রিয় বা সামরিক অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগও থাকছে না।
লাইসেন্সের মেয়াদ
লাইসেন্সের মেয়াদ থাকবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর আরও ১৫ দিন পর্যন্ত। এরপর লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। তবে সাধারণ নিয়ম ও শর্ত পূরণ করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে এই সাময়িক লাইসেন্সকে সাধারণ লাইসেন্সে রূপান্তর করতে পারবে। মেয়াদ শেষের পরও কেউ অস্ত্র নিজের কাছে রাখলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রিটেইনারের যোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা
রিটেইনার হতে হলে বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে, ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর, অপরাধমুক্ত এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স থাকতে হবে। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে—সশস্ত্র বাহিনী বা বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন। সরকারি হাসপাতাল থেকে মেডিকেল ফিটনেস সনদও আবশ্যক।
একজন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ একজন রিটেইনার নিয়োগ দেওয়া যাবে। রিটেইনারের নামে কোনো আ’\গ্নে’\য়া’\স্ত্র লাইসেন্স ইস্যু হবে না; অস্ত্র বহনের দায়িত্ব পালন করলেও অস্ত্রসংক্রান্ত সব দায় লাইসেন্সধারীর ওপরই বর্তাবে।
আচরণবিধি
নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অস্ত্র বহনের সময় সর্বদা লাইসেন্স ও অনুমোদনপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। এই অস্ত্র ব্যবহার করে কাউকে ভ’\য়ভী’\তি প্রদর্শন বা হয়রানি করা যাবে না। নিরাপত্তার প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো কাজে অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ। লাইসেন্স বা লাইসেন্সভুক্ত অস্ত্র হস্তান্তর করা যাবে না এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশ তাৎক্ষণিকভাবে পালন করা বাধ্যতামূলক।


